একটা সময় জয়ের জন্য বাংলাদেশ এভাবেই লড়াই করত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে হারতে হতো ম্যাচ। তখন সমর্থকদের কষ্টের শেষ থাকত না। আজ শ্রীলঙ্কান সমর্থকেরা ঠিক এই কষ্টটাই পাচ্ছেন। আট নম্বর ব্যাটসম্যান হাসরাঙ্গা ডি সিলভার দাপুটে ব্যাটিংয়ে একসময় মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ জিতবে তো? অবশেষে জয় হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু হাসরাঙ্গার লড়াইকে স্যালুট না জানিয়ে উপায় নেই। বাংলাদেশ জিতেছে ৩৩ রানে। ব্যবধানটা এতটা কমিয়ে এনেছেন সেই হাসরাঙ্গা।
রান তাড়ায় নামা শ্রীলঙ্কার দলীয় ৩০ রানে প্রথম আঘাত হানেন মেহেদি মিরাজ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে দানুশকা গুনাথিলাকাকে (২১) কট অ্যান্ড বোল্ড করেন এই অল-রাউন্ডার। স্কোরবোর্ডে আর ১১ রান যোগ হতেই মঞ্চে মুস্তাফিজুর রহমান। তার বলে নিশাঙ্কার (৮) ক্যাচ নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। এরপর ৪১ রানের জুটি গড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস। এসময় সাকিব আল হাসান নিজের দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন কুশল মেন্ডিসের (২৪) উইকেট। কুশল পেরেরা বিরুদ্ধেও লেগ বিফোরের আবেদন উঠেছিল। সাকিব রিভিউ নিয়েও ব্যর্থ হন।
সেই পেরেরাকে পরের ওভারেই শিকার করেন মেহেদি মিরাজ। ৫০ বলে ৩০ রান করা পেরেরা বোল্ড হয়ে যান মিরাজের বলে। ফিরতি ওভার করতে এসে মিরাজ ফের বোল্ড করে দেন ধনাঞ্জয়া ডিসিলভাকে (৯)। ৯৭ রানে লঙ্কানদের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। এরপর আসেন বান্দারাকে (৩) বোল্ড করে মিরাজ ৪ নম্বর শিকার ধরেন। ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ মাত্র ৩০ রান দিয়ে মিরাজ নেন ৪ উইকেট। লঙ্কানদের ৭ম উইকেট পতন ঘটে সাইফউদ্দিনের বলে দাসুন শানাকা (১৪) বোল্ড হওয়ায়।
একপ্রান্ত আগলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হাসরাঙ্গা ডি সিলভা। ক্রমেই তিনি সঙ্গীহীন হয়ে পড়েন। তারপরেও ৩১ বলে ৩ চার এব ৪ ছক্কায় তুলে নেন ফিফটি। সাকিবের করা ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলে ডিম মিডউইকেটে কঠিন ক্যাচ তুলে দিয়ে লিটন দাসের কারণে জীবন পান হাসরাঙ্গা। তখন তার সংগ্রহ ৬৪। হাসরাঙ্গার তাণ্ডবে বল আর রানের ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছিল। চাপ বাড়ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। অতঃপর ৪৪তম ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশকে মহা গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দেন সাইফউদ্দিন। তার বলে আফিফ হোসেনের তালুবন্দি হন হাসরাঙ্গা।
প্রচণ্ড গরমে হাসরাঙ্গাকে অসুস্থ মনে হচ্ছিল। ৬০ বলে ৭৪ রানের ইনিংসে তিনি হাঁকিয়েছেন ৩টি চার এবং ৫টি ছক্কা। শেষ হয় আট নম্বর ব্যাটসম্যানের অসাধারণ লড়াই। ৮ নম্বর জুটিতে আসে ৫৯ বলে ৬২ রান! এতেই প্রমাণ ওই দুই ব্যাটসম্যান কতটা বিপজ্জনক ছিলেন। পরের ওভারে মুস্তাফিজ এসেই দারুণ এক বলে তুলে নেন ২৩ বলে ২১ করা ইসুরু উদানাকে। ক্যাচ নেন মেহেদি মিরাজ। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে দুশ্মন্ত্য চামিরাকে (৫) মুস্তাফিজ তুলে নেওয়ায় শ্রীলঙ্কা ২২৪ রানে অল-আউট হয়। বাংলাদেশ পায় ৩৩ রানের জয়। ৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। মুস্তাফিজ ৯ ওভারে ৩৪ রানে নিয়েছেন ৩টি। সাইফউদ্দিন ২টি আর সাকিব নিয়েছেন ১টি উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান করে বাংলাদেশ। দলীয় ৫ রানে চামিরার বলে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার তালুবন্দি হয়ে ফিরেন লিটন দাস। ৩ বলে তার নামের পাশে ০। দুই সিরিজ পর তিন নম্বরে ফেরা সাকিব আল হাসানের ব্যাটিংয়ে জড়তা ছিল। ৩৪ বলে ২ চারে ১৫ রান করে গুনাথিলাকার শিকার হন। ৬৬ বলে ফিফটি পূরণ করা তামিমের ইনিংস থামে ৭০ বলে ৫২ রানে। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার এবং একটি ছক্কা। চারে নেমে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে দাঁড়ান সেই মুশফিকুর রহিম। ৫২ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ফিফটি পূরণ করেন।
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে পাঁচে নামা মোহাম্মদ মিঠুন ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে প্যাভিলিয়নে ফিরলে মুশফিকের সঙ্গী হন তার ভায়রা-ভাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটিতেই এগোতে থাকে বাংলাদেশ। দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে জুটি পৌঁছে যায় তিন অংকে। এছাড়া মুশফিকও তিন অংকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য। ক্যারিয়ারের ৮ম ওয়ানডে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে তাকে থামতে হয়। মুশফিকের ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ওভার বাউন্ডারিতে গড়া ৮৪ রানের ইনিংসটি থামে সান্দাকানের বলে উদানার তালুবন্দি হয়ে। ভাঙে ১০৯ রানের দারুণ এক জুটি।
মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ ৭১ বলে ক্যারিয়ারের ২৪ নম্বর ফিফটি তুলে নেন। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সঙ্গী হন তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব। ৪৮তম ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে বোল্ড হয়ে যান ৭৬ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ভীষণ প্রয়োজনীয় ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ। শেষদিকে নেমে সুন্দর ব্যাটিং করেছেন আফিফ আর সাইফউদ্দিন। আফিফের ২২ বলে ২৭* আর সাইফের ৯ বলে ১৩* রানের দুটি ছোট অবদানে দলের স্কোর দাঁড়ায় ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান।১০ ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ধনাঞ্জয়া। বাকি তিন উইকেট তিন বোলার ভাগাভাগি করেছেন।