মুফতি তাজুল ইসলাম
ফরজ নামাজ আদায় না করা মারাত্মক অপরাধ। পদ্ধতিগতভাবে পার্থক্য থাকলেও আগের নবীদের যুগেও নামাজের বিধান ছিল। কিন্তু তাঁদের পরবর্তী লোকেরা নামাজের ব্যাপারে গাফিল হয়ে পড়ে। এর পরিণতি হলো জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নবী ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা ‘গাই’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের জুলুম করা হবে না।” (মারইয়াম, আয়াত : ৫৯-৬০)
অন্য আয়াতে এসেছে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে—‘কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদেরও খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ৩৮-৪৭)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়ারই। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফির হয়ে গেল (কাফিরের মতো কাজ করল)।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮২; তিরমিজি, হাদিস : ২৬১৯)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফিরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজেরই। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফির হয়ে গেল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২১ ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৮)
ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তাঁর জিম্মাদারি বা রক্ষণাবেক্ষণ তুলে নেন। মুআজ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।’ (মুসনাদ আহমাদ : ৫/২৩৮)
নামাজ না পড়লে ইহকালেও বহু ক্ষতি সাধিত হয়। বুরাইদা (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করল তার সব আমল বরবাদ হয়ে গেল।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫৩, ৫৯৪)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে গেল তার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদের যেন বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫২; মুসলিম, হাদিস : ৬২৬)
নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি বাহ্যিক নিদর্শন। তাই উমর (রা.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফির।’ (বায়হাকি, হাদিস : ১৫৫৯, ৬২৯১)
আলী (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফির।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১)
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১)
অর্থাৎ নামাজ পরিত্যাগ করা কাফিরদের কাজ, যে মুসলমান নামাজ পড়ল না সে যেন কাফিরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ করল।