রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় ২০ হাজার টাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকতেন মনির। চাকরি করতেন বেসরকারি আইটি ফার্মে। বেতন পেতেন ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রী, এক সন্তান ও মাকে নিয়ে তার সংসার
কিন্তু করোনা শুরুর পর বেতন কমিয়ে ৫০ ভাগ দেওয়া হয়৷ তাই তার পক্ষে আর বাসা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় থাকা সম্ভব হয়নি৷ এক মাস আগে তিনি বাসা ছেড়ে দিয়ে মা-স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান৷ এই চিত্র শুধু মনির হোসেনের বেলায় নয় প্রায় রাজধানীর সব এলাকায়।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বাড়ি বাড়ি ‘টু-লেট’ বা ‘বাড়ি ভাড়া’র সাইনবোর্ড বেশি ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। অলিগলির রাস্তাঘাট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইনে বাড়ি ভাড়ার ওয়েবসাইটগুলোও ছেয়ে গেছে বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপনে। ভাড়াটিয়ারা বেশি ভাড়ার বড় বাসা ছেড়ে স্বল্প ভাড়ার ছোট বাসা খুঁজছেন। অনেক ভাড়াটিয়া ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।
ভাড়াটিয়া পরিষদের তথ্যে, এরই মধ্যে ঢাকার মোট ভাড়াটিয়ার ৪০ শতাংশ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। অন্যদিকে বাড়িওয়ালাদের অবস্থাও খারাপ। বিশেষ করে যারা বাড়ি ভাড়ার ওপর ভিত্তি করে সংসার চালান তাদের মাস চলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু নিম্নবিত্তই নয়, ঢাকায় বাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারও। সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজে যাতায়াতের জন্য আগে যেসব অভিজাত এলাকায় অভিভাবকরা বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তারাই এখন কম ভাড়ায় অন্য এলাকায় বাসা নিচ্ছেন। চাকরিজীবীদের কেউ কেউ লকডাউনে হোম অফিস করায় কর্মস্থল থেকে দূরে গিয়ে অন্যত্র স্বল্পমূল্যে বাসা নিচ্ছেন।
এ ছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেই বাসাগুলোও খালি পড়ে আছে। এমনকি মহামারীর কারণে নতুন তৈরি হওয়া অনেক ফ্ল্যাটও এখন ভাড়াটিয়াশূন্য।
রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শাহিন আলম বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর আমাদের ব্যবসা কমতে থাকে। এক সময় আমাদের রেস্টুরেন্টটিও বন্ধ হয়ে যায়। কাজ না থাকায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ১৫ হাজার টাকায় যে ভাড়া বাসায় থাকতাম তা ছেড়ে দেই। এখন আমি পরিবারের সদস্যদের গ্রামে রেখে একটি মেসে ভাড়া থাকি।
মহামারীর কারণে ভালো নেই বাড়িওয়ালারাও। ঢাকায় যেসব বাড়ির মালিক আগে বছর বছর বাড়ি ভাড়া বাড়াতেন চলতি বছরে অনেকেই ভাড়া বৃদ্ধি করেননি। কেউ কেউ আবার ভাড়াটিয়ার অনুরোধে ভাড়া কমিয়েও দিচ্ছেন। এমনই একজন মালিক বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নাসিমা আক্তার বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বৃদ্ধি করিনি। এতে যদি ভাড়াটিয়াদের কিছুটা স্বস্তি মেলে আমি তাতেই খুশি।
বাড়ি ভাড়া বিষয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির জয় হাসান বলেন, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আমি বাড়ি করেছি। ফ্লাট ভাড়ার টাকা দিয়েই আমার সংসার চলে। কিন্তু করোনায় এমন ভাড়াটিয়া সংকটে আগে কখনো পড়েননি। এমনকি ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ঢাকা শহরের ৪০ শতাংশ ভাড়াটিয়া যাদের আয় উপার্জন কমে গেছে তারা গ্রামে চলে গেছেন। আগে যে ভাড়াটিয়া ঢাকায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনিই এখন খরচ কমাতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া নিচ্ছেন। এই ভাড়াটিয়াদের অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন আবার অনেকে বেতন ঠিকমত পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।