নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৭বছর প্রেমের পর প্রেমিকার বিয়ের আবদার। এমরান হোসাইন মুন্না তখন স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন প্রবাসে, সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা করছিলো। প্রেমিকার চাপাচাপিতে লন্ডন থেকে এসে নিজের পরিবারকে রাজি করিয়ে তাদের সম্মতিতে ২০১৮সালের ২৫ জানুয়ারি বিয়ে করে প্রেমিকা সৈয়দা সাজিয়া শারমিন ঊষাকে। ফিরে যাওয়া হয়নি আর দেশে থেকেই পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি ইপিজেডে ঠিকাদার করতে থাকে। প্রথমে একবছর ভালোই চলছিলো সংসার জীবন।
বছরখানেক পর স্ত্রী ঊষা বায়না ধরে ঢাকায় লেখাপড়া করবে। স্ত্রী’র আবদার রক্ষায় তাকে উচ্চ শিক্ষিত করতে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করায়। এটাই হয়তো কাল হয়ে দাঁড়ায় মুন্নার জীবনে! স্বামীর দেয়া খরচে ঢাকায় এক কাজিনের সাথে থেকেই লেখাপড়া করছিলো স্ত্রী ঊষা। তবে দিন দিন স্ত্রী’র মাঝে কিছু পরিবর্তন খেয়াল এড়ায়নি মুন্নার। ঢাকার স্থানীয় যুবক সোহেল (২৯) নামে একজনের সাথে স্ত্রী’র পরোকিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাকে কুমিল্লা চলে আসতে বলে।
তবে এতে বাঁধ সাধে স্ত্রী। একপর্যায়ে উষার পরোকিয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর বারবার তাকে অনুরোধ অনুনয় করতে থাকে কুমিল্লায় চলে আসার জন্য। কোন ভাবেই রাজি করাতে না পেরে অবশেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর শেষবারের মত অনুরোধ করে হোয়াইট এপে বার বার মেসেজ করে। নিজ সীদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় স্ত্রী। শেষ পর্যায়ে স্ত্রীকে জানায় না এলে আত্মহত্যা করবে সে। সে কথায় কোন কর্ণপাত না করেই তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আত্মহত্যা করলেও তার এতে কিছু যায় আসে না। এরপরই নিজের রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলিয়ে কয়েকটি ভিডিও পাঠিয়ে শেষ বারের মত স্ত্রী’কে অনুরোধ করে চলে আসার জন্য। জবাবে, নিজের ভবিষ্যৎ গড়া আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে মুন্নার সাথে সংসার না করার কথা জানায় ঊষা।
এরপর নিজের বন্ধুদের উদ্দেশ্য কিছু কথা মেসেজে লিখে সিলিং ফ্যানে ঝোলানো সে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে। অত্মহত্যার আগে হতভাগ্য স্বামী মুন্নার (২৯) শেষ মেসেজের একটি অংশ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো, “যারা এই মেসেজগুলো পড়বেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতেছি আমার মৃত্যুর জন্য আমার বউ দায়ী, পরকীয়া করে আরেকজনের লগে শুইছে এগুলো ধরতে পারছি বলে আমার উপর গত মাস খানিক অত্যাচার চলছে। মুখ বুঝে সহ্য করছি আজ আর পারলাম না তাই চলে গেলাম।
আমাদের সিআইডি বন্ধু ঐ ছেলের সকল তথ্য জানে, আমার তোদের কাছে একটাই চাওয়া তারা আমার জীবনটা শেষ করে দিছে। তাদের একবারে মারবি না আমাকে যেভাবে তিলে তিলে মারছে ঐ ভাবে মারবি।। তোদেরকে এগুলো লজ্জায় বলতে পারিনাই তাই আজ হেরে গেলাম জীবন যুদ্ধে তবে ঊষার শরীরের প্রতিটা পশম যেন শিউরে যায় তার ওপর প্রতিশোধ এটাই। চাওয়া আর কিছু নাই” এবিষয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মুন্নার বাবা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য পুত্রবধূ সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষা (২৮) সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামী করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ।
লিখিত অভিযোগ ও মুন্নার ছোট ভাই ইমামের বক্তব্যে জানা যায়, বিগত কিছুদিন ধরেই মুন্নার কাছে তার স্ত্রী জেলার লাকসাম উপজেলার খিল্লাবাজার রাজাপুর গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে উষা বিভিন্ন ভাবে ঢাকায় লেখাপড়ার খরচের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করতে থাকে। মুন্না চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হলেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতো। বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সময় মুন্নাকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শব্দ শুনে মুন্নার ঘরে উকি দিয়ে তাকে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থা দেখতে পেয়ে দ্রুত দরজা ভেঙে মুন্নার বাবা সহ পরিবারের লোকজন তাৎক্ষনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ রাতেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে মুন্নার লাশ দাফন করা হয়।
এবিষয়ে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও মুন্নার স্ত্রী অভিযুক্ত সৈয়দ সাজিয়া শারমিন ঊষার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মুন্নার পরিবার স্বজন ও বন্ধুমহল পরোকীয়াশক্ত স্ত্রী ঊষার পরোকিয়ার বিষয়ে মুন্না ও ঊষার বিভিন্ন সময়ে মেসেজে কথোপকথনের প্রমাণ ও ভিডিওর কথা উল্লেখ করে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।
এবিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।