এক মাসের ব্যবধানে ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২২৬ টাকা বা ২২ শতাংশ বেড়েছে। এখন একজন ক্রেতাকে এক হাজার ২৫৯ টাকা দিয়ে এই সিলিন্ডার কিনতে হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই দাম নির্ধারণ করেছে, যা গতকাল রবিবার থেকেই কার্যকর হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় গতকাল বিইআরসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম নতুন করে নির্ধারণ করে দিয়েছে বিইআরসি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডারের দাম ছিল এক হাজার ৩৩ টাকা। আগের মাসে ছিল ৯৯৩ টাকা। তবে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম আগের মতো ৫৯১ টাকাই আছে। গাড়িতে ব্যবহৃত প্রতি লিটার এলপিজির মূল্য ৫৮ টাকা ৬৮ পয়সা, যা আগের মাসে ছিল ৫০ টাকা ৫৬ পয়সা।
জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি প্রতি কেজি এলপিজির খুচরা দাম ১০৪ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করেছে। সে অনুযায়ী ৫.৫ কেজি, ১২.৫ কেজি, ১৫, ১৬, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩, ৩৫ এবং ৪৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডারগুলোর দাম ঠিক করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাম সমন্বয় করার বিষয়টি জানান বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম অনেক বেড়ে গেছে। শুধু সৌদি সিপির ভিত্তিতে ১২ কেজি এলপিজি মূল্য ১৫৮ টাকা বেড়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’
বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, অক্টোবর মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেনের মূল্য ও বিউটেনের সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস বা সিপি যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৮০০ ডলার ও ৭৯৫ ডলার। প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ অনুপাত (৩৫:৬৫) বিবেচনায় গড় মূল্য প্রতি টন ৭৯৬.৭৫ ডলার। এসব বিবেচনায় বেসরকারি এলপিজির খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১০৪.৯২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতি ১২ কেজি এলপিজির মূল্য এক হাজার ২৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আবদুল জলিল বলেন, ‘আগস্টের তুলনায় অক্টোবরে প্রতি টন প্রোপেন ও বিউটেনের মূল্য গড়ে ১৪০ ডলার বেড়েছে।’
এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের দাম প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এটি সৌদি সিপি নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তি মূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে প্রতি মাসে এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি। এর মধ্যে বেসরকারি বিপণন কম্পানিগুলোর আবেদনে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার শুনানি করে পরিচালন ব্যয় বাড়িয়ে নতুন এই মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়।
এত দিন আগের মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী নতুন মাসের এলপিজির খুচরা মূল্য নির্ধারিত হতো। নতুন নিয়মে চলতি মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী এলপিজির খুচরা মূল্য নির্ধারিত হবে।
গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। এর পর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।
জানা যায়, এলপিজি খাতে ব্যবসা পরিচালনায় বিইআরসির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে মোট ২৮টি কম্পানি। এর মধ্যে বর্তমানে বিপণন কার্যক্রম চালু রয়েছে ১৮টি কম্পানির।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন কমিশনের সচিব রুবিনা ফেরদৌসী।