নিজস্ব প্রতিবেদক:


নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের কবল থেকে রক্ষার দাবিতে দীর্ঘ দিন যাবত সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন করে আসছেন আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস। আর এসব কারনেই এবার তিনি পরিণত হয়েছেন নর্থ সাউথের টার্গেটে। এবার ড. সুফী সাগর সামস কে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ। ভিসির নাম ব্যবহার করে, গত ২৭ অক্টোবর বিওটি মেম্বার আজিজ কায়সার টিটু তার সিটি ব্যাংকের ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর ব্যারিস্টার তানজিবুল আলমকে দিয়ে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়।

যদিও লিগ্যাল নোটিশে বিওটি মেম্বারদের কোন নাম ব্যবহার করেনি তারা। শুধু তাই নয় বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান ড. সুফী সাগর সামস। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর জঙ্গি তৈরির কারখানায় পরিণত হওয়াসহ নানা অভিযোগে বিপর্যস্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচির পর আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহমুদ খান অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপরই আমাকে মানহানির মামলার ভয়সমেত উকিল নোটিশ পাটিয়েছে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ। তবে মামলা-হামলার হুমকি আমাকে সত্য থেকে দূরে রাখতে পারবে না। আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।’

আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ কায়সার টিটু নর্থ সাউথের বিওটি সদস্য হয়ে নিজের ব্যাংকের আইনজীবীকেই এ কাজে নিয়োগ করেছেন। আর এটিকে নর্থ সাউথ থেকে টাকা বাগিয়ে নেয়ার আরো একটি ফন্দি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আজি-কাসেমকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য রেহানা রহমান। আজিম-কাশেম সিন্ডিকেটে তার অবদান কম নয়। দুর্নীতি প্রক্রিয়াকরণ থেকে সমাপ্ত পর্যন্ত যোগসাজস ও অভ্যন্তরীণ কাজে আজিম-কাশেমের অন্যতম হাতিয়ার তিনি। সুন্দরী হওয়ার কারনে সেটাকে পুঁজি করে নানা সুবিধা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে রেহানা বিএনপির সাবেক নেতা ও কুখ্যাত রাজাকার সাকা চৌধুরীর খালাতো বোন।

এদিকে এনএসইউর পাঠানো নোটিশে ড. সুফী সামস এবং আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এর সমস্ত অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়। নোটিশে বলা হয়েছে নর্থ সাউথের কোনো প্রকার সম্পর্ক ছাড়াই অভিযোগ করেছে সুফী সাগর সামস। কিন্তু রাষ্ট্রের শীর্ষ একটি ট্রাস্টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের অনিয়মের বিরুদ্ধে যে কোনো সাধারন মানুষই কথা বলতে পারেন। জনস্বার্থে-দেশের স্বার্থে যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন। আর স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এ ধরনের কাজই করে থাকে। তাই স্বভাবতই নোটিশের এ অংশের কোনো ভিত্তি নেই। এর বাইরে নোটিশে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও নর্থ সাউথ বাঁচাতে আন্দেলনের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাপানো খবরগুলোকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ এর বহু আগে থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নর্থ সাউথের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠে এসেছে। জঙ্গি মদদের অভিযোগ ১০/১২ বছরের পুরনো, ট্রাস্টি সদস্যদের গাড়ি বিলাস, জমি কেনায় অনিয়ম, অতিরিক্ত বিভাগ খোলা, ছাত্র ভর্তি সবই পুরনো অভিযোগ। যেগুলো নিয়ে আগেই কম বেশি লেখালেখি ও আলো চনা হয়েছে। যার প্রমাণ রয়েছে ভুরি ভুরি। ড. সুফী সাগর সামস কেবল মাস চারেক আগে এ বিষয়গুলো সামনে এনে প্রতিষ্ঠানকে আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের কালো হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছেন। নোটিশে ব্লগার রাজীব হত্যাকান্ডের আসামী নাফিস ইমতিয়াজকে ভর্তির বিষয়টিকে মিথ্যা দাবী করেছে কর্তৃপক্ষ। অথচ গণমাধ্যমের কাছে সেই প্রমাণ রয়েছে। সব মিলিয়ে মামলা-হামলার ভয় দেখালেও আন্দোলন থেকে সরতে রাজি নন আইন ও সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস। তিনি বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু করেছি যে কোনো মূল্যে আমি সেটা চালিয়ে যেতে চাই। কোনো ভয়ই আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

সূত্র: সিটিজেন নিউজ