চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সীমান্ত কুমার বর্মণ নামে সরকারি চাল আত্মসাৎ মামলার এক আসামি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়।
রোববার (২১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। সীমান্ত কুমার ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জুন মাসে সাধারণ সহায়তা (জিআর) প্রকল্পের মাধ্যমে সদর উপজেলার মসজিদের ওয়াজ মাহফিল, মন্দিরের নামযজ্ঞ ও মাদরাসার এতিমখানায় খাবারের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২১৭ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের জন্য দেওয়া হয় ৩৪ টন চাল।
সে সময় ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জাল কাগজপত্র তৈরি করে বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে।
পরে ২০১৯ সালের মার্চে এ ঘটনার অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক। সে সময় সীমান্ত কুমার বর্মণ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢোলারহাট এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৮ টাকা ১০ পয়সা জমা দেন।
একই বছরের ১৩ নভেম্বর ছয় টন সরকারি প্রকল্পের চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে সীমান্ত এবং উপজেলা খাদ্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহসানুল কবীর পলাশ। পরদিন আদালতের মাধ্যমে ছয়জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৪৭ দিন কারাগারে আটক থাকার পর সীমান্ত উচ্চ আদালতে জামিন পান। মামলাটি এখনো চলমান।
সরকারি বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ মামলার আসামিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।
ঢোলারহাট ইউনিয়নের ঝলঝলিপুকুর এলাকার শরৎ চন্দ্র বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় জলসা, নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের সরকারি বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ করেন। তাকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া একেবারেই ঠিক হয়নি।
ঢোলার হাট এলাকার কেরামত আলী বলেন, এলাকায় অনেক যোগ্য প্রার্থী ছিল। যে চেয়ারম্যান জেল খেটেছেন, তাকে কীভাবে আবার মনোনয়ন দেওয়া হলো। আমি বুঝতে পারছি না। তার মনোনয়নের পেছনে অন্য কোনো ঘটনা থাকতে পারে।
মামলার বিষয়ে সীমান্ত কুমার বর্মণ বলেন, যে কোনো সরকারি প্রকল্পের চাল প্রকল্প সভাপতির নামে বরাদ্দ হয়। কমিটির সভাপতিই চাল উত্তোলন করেন। সেসব বরাদ্দ উত্তোলনে আমার সম্পৃক্ততা দেখিয়ে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। আমি ওই চাল আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নেত্রী আমাকে প্রতীক দিয়েছেন আর জনগণই আমাকে ভোট দিবেন।
রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সেন বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে তালিকায় তার নাম পাঠানো হয়েছিল। মামলায় তিনি এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে আমরা সীমান্তের নামে যে চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা আছে, তা উল্লেখ করেছি।