স্বপন আহাম্মেদ, চুনারুঘাট
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে হাওরের মধ্যে কাজ করা অবস্থায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের প্রানহানীর ঘটনা ঘটেছে। এই মৃত্যুর ঘটনায় বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উভয় পরিবারের মধ্যে ২০হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১নং উত্তর পূর্ব ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে মজলিশপুর মদিনা পাড়া(বন্দের বাড়ির)মৃত মোহাম্মদ খতিব উল্লার ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল করিম মিয়া(৬০)ও একই পাড়ার পাশের বাড়ির মৃত মোহাম্মদ তারা উল্লার ছেলে মোহাম্মদ নুর উদ্দিন মিয়া(৫০)। ঘটনাটি ঘটেছে ২৪সেপ্টেম্ভর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। এলাকাবাসী ও উভয়ের পরিবার সূত্রে জানাযায়, মজলিসপুর লক্ষীবাউর রোডের মাধ্যের বিল এড়িয়ার (পিঠাবাড়ি)হাওরে আমন ধানি জমিতে কৃষি কাজ করতে যান দু’জন। এসময় হঠাৎ একটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নিহতরা। পরে আশপাশের হাওরে ধানি জমিতে কাজ করা অন্য শ্রমিকরা তাদেরকে জমির মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে কাছে আসেন। এবং তাদের মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
তাৎক্ষণিক তারা বিষয়টি উভয় পরিবারের লোকজনের মধ্যে অবগত করলে পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী হাওরে গিয়ে জমি থেকে লাশ গুলো উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এদিকে এলাকাবাসীর কাছ থেকে নিহত হওয়া আব্দুল করিম মিয়ার পরিবারে রয়েছে স্রীসহ ৬টি সন্তান রয়েছে। তাদের মধ্যে ১টি ছেলে ও ৫টি মেয়ে কন্যা সন্তান রয়েছে। আর নুর উদ্দিন মিয়ার পরিবারে স্রী সহ ৬টি সন্তান রয়েছে। তাদের মধ্যে ২ছেলে ও ৪ মেয়ে কন্যা সন্তান রয়েছে। উভয় পরিবারের উপার্জনকারীকে হারিয়ে আকাশ বাসাত ভারী হয়ে উঠে তাদের আহাজারিতে। তাদের পাশের বাড়ির বাসিন্দা জাহের মিয়া ও বাউল শিল্পী শাহ মুজাহিদ মিয়া জানান,নিহত হওয়া দু’জন এলাকার মধ্যে খুবই ভালো মানুষ ছিলেন এবং একে অন্যর সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক রেখে একসাথে চলাফেরা করতেন। এমনকি তারা হাওরের কৃষিকাজ সকল ধরনের কাজকর্ম বন্ধুর মতো করে একসাথেই করতেন।
আজও এর তেমন একটা ব্যতিক্রম হয়নি তাদের কাজে যাওয়ার মধ্যে। এক সাথে গিয়েছিলেন কাজে এবং এক সাথেই মৃত্যু বরণ করলেন। উভয়ের পরিবার সূত্র ও ১নং ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মুনসুর মিয়া তাদের জানাজা ও পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করার বিষয়টিও নিশ্চিত করে বলেন,আজ বাদ মাগরিবের নামাজের পর মজলিসপুর জামে মসজিদ মাঠে উভয়ের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এবং তাদেরকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হবে বলেও জানান তিনি। এ ব্যপারে বানিয়াচং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মলয় কুমার দাসের সাথে যোগাযোগ করা তিনি জানান,তাদের নাম ঠিকানা সহকারে সবকিছু তথ্য জেলায় প্রেরন করা হয়েছে। এবং উভয় পরিবারকে ২০হাজার করে টাকা প্রদান করা হবে। এদিকে তাদের মৃত্যুর খবর শুনে বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মা সিংহ তাদের বাড়িতে বেলা ৩টার দিকে দেখতে যান। এবং তারা পরিবারের সবাইকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সমবেদনা প্রকাশ করে উভয় পরিবারের হাতে নগদ ২০হাজার করে অর্থ প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)অজয় চন্দ্র দেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কোনো প্রকার অভিযোগ না থাকার কারনে তাদের লাশটি দাফন করার জন্য উভয় পরিবারকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মাগরিবের নামাজের পর বিভিন্ন এলাকার মুসল্লীগন মজলিসপুর জামে মসজিদ মাঠে পাঙ্গনে হাজারো মুসল্লীগনের উপস্থিতিতে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে উভয় দু’জন পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়।