স্টাফ রিপোর্টার:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার মুরাদনগরের কবিতীর্থ দৌলতপুরে আগামিতে জাতীয়ভাবে নজরুল জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান পালনের আশ্বাস দেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। আয়োজক সংগঠন “নজরুল নিকেতন” এর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কুমিল্লা ও কবিতীর্থ দৌলতপুরে জাতীয় কবির অনেক স্মৃতি বিজরিত স্হান রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। নতুন প্রজম্ম যেন নজরুল সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সে বিষয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে, প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকাস্থ নজরুল ইনস্টিটিউটের সুদৃশ্য ও নান্দনিক ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে নজরুল গবেষণা ও চর্চা আরো বিস্তৃত ও প্রসারিত হবে মর্মে আশা করা যাচ্ছে।

গতকাল রবিাবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে নজরুল নিকেতন কর্তৃক আয়োজিত ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতীর্থ দৌলতপুর পদার্পণের ১০১ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দু’জনেই বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন ও বিশ্বদরবারে ঠাঁই করে দিয়েছেন। কাজী নজরুল এমন সময়ে জন্মগ্রহণ করেন যখন বাংলা সাহিত্যে দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর রবীন্দ্রনাথ প্রাচুর্যের মধ্যে বেড়ে ওঠলেও নজরুলকে সহ্য করতে হয়েছে দারিদ্র্যের কষাঘাত।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নজরুলকে আকর্ষণ করেছিল। এখানকার অনুপম নৈসর্গ থেকে তিনি আহরণ করেছেন গান-কবিতার অনাবিল উপাদান। সে সময় চঞ্চল প্রকৃতির নজরুল সুদূর কোলকাতা হতে ছুটে এসেছেন ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রতিমন্ত্রী এসময় নজরুল জন্মজয়ন্তীতে কুমিল্লার দৌলতপুরে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
নজরুল নিকেতন এর আহবায়ক সাইফুর রহমান বকুল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ শহীদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) এবং বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য কবি হাসান আলীম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নজরুল নিকেতন এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজুল ওয়াদুদ বাহার, এরশাদুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান সরকার নজরুল নিকেতন এর কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, নজরুল নিকেতন হবে ভারতের “শান্তি নিকেতন” এর আদলে গড়া একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান। এখানে থাকবে- একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, একটি অতিথিশালা, অনুষ্ঠান আয়োজনার্থে একটি বৃহৎ মিলনায়তন ও মঞ্চ, নজরুল স্মৃতি জাদুঘর ও আর্কাইভ।
মিজানুর রহমান বলেন আমাদের লক্ষ্য বাংলা ভাষাভাষী সকল নজরুল প্রেমীদের জন্য কবিতীর্থ দৌলতপুরকে সত্যিকারের তীর্থ ভূমিতে রূপান্তরিত করা, শুদ্ধ নজরুল চর্চা ও প্রচার, সংস্কৃতিবিমূখ তরুণ প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক বলয়ে আনয়ন। “নজরুল নিকেতন” কবিতীর্থ দৌলতপুর কেন্দ্রীক নজরুলের উপর গৃহীত সরকারি-বেসরকারি যেকোন কার্য্যক্রমকে সহযোগিতা করবে ও সাধুবাদ জানাবে। নজরুল নিেেকতন এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উল্লেখিত, পরিকল্পনার মধ্যে নার্গিস-নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়, একটি নজরুল তোরন ও নজরুল মঞ্চ ব্যতিত তেমন কিছু এ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের নিকট জোর দাবি জানোনো হয়। পরে মনোজ্ঞ নজরুল সংগীত পরিবেশিত হয়।