কুমিল্লা
অন্যের জমি আঙ্গিনা ছাদে স্বেচ্ছাশ্রমে বাগান করে দেয় বৃক্ষপ্রেমী আল-আমীন!
গত দের বছরে গড়েছেন ৫০টি, ইচ্ছে ১হাজার বাগান করে দেয়ার, রোপন ও পরিচর্যার শর্তে বিনামূল্যে করেন চারা বিতরণ
বাড়ির ছাদ, খালি জমি বা আঙ্গীনায় বাগান করা ও গাছ লাগানো ইচ্ছে আছে কিন্তু সময়ের অভাব কিংবা পরিশ্রমের ভয়ে বাগান করতে পারেন না অনেকেই। গাছের প্রতি ভালোবাসা আছে এমন মানুষের বাড়িতে গিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাগান করে দেন আল-আমীন। শুধু গাছ লাগানো বা বাগান করে দেয়াই নয়, ফলন না আসা পর্যন্ত গাছ ও বাগানের পরিচর্যা, পরামর্শ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ সব কিছুই করেন নার্সারি ব্যবসায়ী প্রবাস ফেরত তরুণ আল-আমীন। বুড়িচংয়ের ভারেল্লা দক্ষিণ ইউপির গোমতী নদী ঘেসা রামচন্দ্রপুর গ্রামের ক্ষুদ্র এই কৃষি উদ্যোক্তা গত দের বছরে নিজ এলাকাসহ কুমিল্লার বিভিন্ন গ্রামে অন্যের জমিতে গড়ে দিয়েছেন ছোট বড় অর্ধশতাধিক বাগান। ইতিমধ্যে আরো বেশকিছু বাগান করে দেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে তার হাতে। সরকারি বেসরকারি কৃষি সহায়তা পেলে ১হাজার বাগান করার ইচ্ছে রয়েছে তার। নার্সারি থেকে চারা কিনে শুধু মাত্র গাড়ি ভাড়ার টাকা দেয়ার পর বাকি সব দায়িত্বই তার। গাছ ও বাগানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এমন ব্যাতিক্রমি উদ্যোগ বৃক্ষ প্রেমী আল-আমীনের। কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়া প্রবাস ফেরত এই তরুণ জানান, শুধু নিজের লাভ জন্যই নয়, বাগান করা, গাছের পরিচর্যা এসবই তার শখ, আর সেটা নিজের হোক বা অন্য কারো।
দুবছর আগে প্রবাস থেকে দেশে এসে শখের বসে নিজের ৭০শতাংশ জমিতে লেবু ও পেয়ারার বাগান করেন। নিজ এলাকায় গোমতীর চরে করেছেন কলার বাগান। ১৫ শতাংশ জমিতে ছোটখাটো একটি নার্সারিও গড়ে তুলেছেন বাড়ির কাছেই। কীটনাশক মুক্ত অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী আল-আমীন। দেশি বিদেশি নানা জাতের ফুল ফল ও ঔষধী গাছের চারা রয়েছে তার নার্সারিতে। হাতে হাতে বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে অর্ডার নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ারেও চারা পৌঁছে দেয়া হয় তার এই গোমতী নার্সারি থেকে। নার্সারী থেকে চারা বা গাছ আপনাকে কিনতেই হবে এমনটিও নয়। গাছ ও লফ বিক্রির লাভের একটি অংশ থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও সমাজিক সংগঠনের বৃক্ষপ্রেমীদের মাঝে গাছ রোপন এবং রোপণ পরবর্তী গাছের সঠিক পরিচর্যার শর্তে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। আর গাছের চারা বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে প্রবাসী ও ব্যবসায়ীসহ ব্যস্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের সঙ্গীদের নিয়ে বাগান করে দেন বিনামূল্যে স্বেচ্ছাশ্রমে। নিজের পেয়ারা, লেবু, কলা বাগান, পুকুর, নার্সারী দেখাশোনা ও বেচাকেনা করেন নিজেই। ছোট পরিসরে হলেও শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার পরেও এ থেকে মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন। গতবছরের শুরুতে গালানো থাই জাতের বারোমাসি পেয়ারা বাগান থেকে এবছরই ৩০ থেকে ৪০হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন। নতুন বাগানে ফলন আসতে শুরু করেছে আগামীতে ফলন আরো বাড়বে। ১২ মাসই পেয়ারা, সীডলেস লেবু ও কলার ভালো ফলন পাবেন বলে আশা তার। আল আমিন স্বপ্ন দেখেন সুজলা সুফলা শস্য শ্যমল এক সুন্দর বাংলাদেশের। দেশে এসে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ আর ইউটিউব দেখেই নার্সারী, পেয়ার, লেবু ও কলা বাগান করেছেন। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে নার্সারি ও বিভিন্ন ফলের বাগান করার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানায় আল-আমীন।
নিজে বাগান করা ও স্বেচ্ছাশ্রমে অন্যেদের বাড়ির ছাদ , আঙ্গীনা ও জমিতে বাগানপ্রমী মানুষকে বাগান করে দেয়া ব্যতিক্রমি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা এই তরুণ উদ্বুদ্ধ করছেন অন্যদেরও। নিজ গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় অন্যদের অর্ধশতাধিক বাগান করে দেয়া আল আমিন স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমী মানুষের কাছে এখন পরিচিত মুখ। স্বেচ্ছাশ্রমে অন্যেদের বাগান করে দেয়া এবং দীর্ঘসময় বিনামূল্যে সেসব বাগানের পরিচর্যার পেছনে উদ্দেশ্যের কথাও জানান তিনি। এটি একদিকে যেমন নিজের নার্সারী ব্যবসা প্রসারের কৌশল আবার ভালো জাতের গাছ ও সঠিক পরিচর্যায় ভালো ফলনের মাধ্যমে অন্যদেরকে গাছ বা বাগানের প্রতি আগ্রহী ও উৎসাহীত করে তুলতেই তার এ ভিন্নধর্মী প্রচেষ্টা। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে হাতে কলমে শিখতে, এসব কাজে স্বল্প পারিশ্রমিকে বা বিনামূল্যে সহায়তা করেছে তারই এলাকার আশেপাশের স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুণ, কিশোর ও বেকারদের অনেকে। কুমিল্লার বাসিন্দা হলে যে কেউ চাইলেই আল-আমীনের সাথে ০১৭৬৫-৪১৬২৭৬ নাম্বারে যোগাযোগ করে আপনার বাড়ির ছাদ, পরিত্যক্ত জায়গা বা আঙ্গীনায় গড়ে তুলতে পারেন আপনার শখের ফুল ও ফলের বাগান।