টেকনাফে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের পাঠানো তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
মূলত ইউএনএইচসিআর এর নিজস্ব নিরাপত্তা নীতির কারণে কার্যক্রমটি স্থগিত থাকার তথ্য জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৩ আগস্ট টেকনাফের জাদিমুরা এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার পর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকটি সাইনবোর্ড ও স্থাপনা ভাংচুর করে। স্থানীয়রা শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়কে (কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক) টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। ইউএনএইচসিআর এর পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার ব্যাপারে কোনোভাবে অবহিত করা হয়নি।
কিন্তু প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমের কাছে দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার পরও তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণ অব্যাহত থাকার তথ্য জানিয়েছিলেন।
গত ২০ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের পাঠানো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণ শুরু করেছিল শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি দল। এ কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টরা ২২ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ৩৩৯ টি পরিবারের মতামত গ্রহণ করেছিল।
কিন্তু গত ২২ আগস্ট শর্তপূরণ ছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যেতে রাজী না হওয়ায় দ্বিতীয় দফার প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
ওইদিন দুপুরে টেকনাফের শালবন ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানিয়েছিলেন, সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি থাকার পরও কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যেতে রাজী হচ্ছে না। তাই মতামত গ্রহণকারী কাউকে প্রত্যাবাসন করা যাচ্ছে না। তারপরও মিয়ানমারের পাঠানো তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা মতামত গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
কালাম বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণের ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। দ্বিতীয় দফার প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার পরও সেটি (মতামত গ্রহণ) অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত ছিল।
সিদ্ধান্ত মতে, গত ২৩ আগস্টও মিয়ানমারের পাঠানোর তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণের কথাছিল। কিন্তু ওইদিন টেকনাফের জাদিমুরা এলাকায় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের স্থানীয়রা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এ নিয়ে ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি দলের সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, শরণার্থী সংস্থা ইউএনএচিসিআর যে কোনো কর্মকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে নিজস্ব একটি নিরাপত্তা নীতিমালা রয়েছে। টেকনাফে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইউএনএইচসিআর প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণের ব্যাপারে অনীহা জানায়।
এ নিয়ে গত ২৩ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের পাঠানো তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণ স্থগিত রয়েছে বলে জানান আবুল কালাম।
শরণার্থী কমিশনার বলেন, নিরাপত্তাবোধ নিয়ে ইউএনএইচসিআর যখনই সম্মতি জানাবে তখনই তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এদিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ হত্যার ঘটনায় কয়েকদিন ধরে স্থানীয়রা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখালেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে নিরাপত্তাবোধ বিঘিœত হওয়া নিয়ে ইউএনএইচসিআর এর পক্ষ থেকে কোনোভাবে অবহিত করা হয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।