চোখরাঙানি তখন পরাজয়ের। অপেক্ষা আরেকটি হতাশাময় সমাপ্তির। হাওয়া বুঝে গ্যালারি ছেড়ে গেছেন দর্শকদের অনেকে। মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে আফিফ হোসেনের জুটির শুরু সেখান থেকেই। ঝড়ো ফিফটিতে জাতীয় দলে ফেরা রাঙালেন আফিফ। মোসাদ্দেক থাকলেন শেষ পর্যন্ত। দুঃসময়ের চক্রে থাকা বাংলাদেশকে স্বস্তির জয় এনে দিল দুজনের দারুণ জুটি।
রানটা খুব বেশি না হলেও চ্যালেঞ্জিং। জিততে হলে ১৮ ওভারে করতে হবে ১৪৫। এ লক্ষ্যে ভালো শুরু করার পরেও শুরু হয়েছিল পতনের মিছিল। একপর্যায়ে ছিল হারের চোখ রাঙানি। কিন্তু ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু। আশ্চর্য পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। সে পথে ভীষণ চাপের মধ্যেও রানের গতি বাড়িয়ে পাল্টে দেন ম্যাচের মোড়।
তাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটের স্বস্তির জয় তুলে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে শুভ সূচনা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। আর হ্যাঁ, সেই তরুণটি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আটে ব্যাট করতে নামা আফিফ হোসেন।
শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। তৃতীয় ওভারে বিনা উইকেটে ২৬ রান তুলেছিলেন দুজন। কিন্তু ওই ওভার থেকেই পতনের শুরু। চাতারার করা এ ওভারের শেষ বলে বোল্ড হন লিটন। পরের ওভারে চার বলের ব্যবধানে ফিরে যান সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিম। বিনা উইকেটে ২৬ রান তোলা বাংলাদেশ মাত্র ১০ বলের ব্যবধানে ৪ উইকেটে ২৯! এরপর দ্রুতই ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমানও।
বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু দশম ওভারের পঞ্চম বল থেকে। মাদজিভাকে চার মারেন আফিফ।শন উইলিয়ামসের করা ১১তম ওভারে ১৫ রান তুলে নেন এ তরুণ। পরের ওভারে রায়ার্ন বার্লের প্রথম দুই বলে টানা দুই ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক। ১২তম ওভার শেষে ৩৬ বলে ৪৯ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হাতে ৪ উইকেট।
সপ্তম উইকেটে ৪৭ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন আফিফ-মোসাদ্দেক। তাঁদের এ জুটিই জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। শেষ ১৮ বলে ২৮ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। ম্যাচ তখনো বেশ কঠিন ছিল। কারণ নিজেদের ইনিংসে জিম্বাবুয়ের পেসারদের বিপক্ষে খাবি খেয়েছেন ব্যাটসম্যানেরা। রান তো সেভাবে ওঠেইনি উল্টো পড়েছে উইকেট। আর শেষের এ তিন ওভার পেসারদের জন্য রেখে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
কাইল জার্ভিসের করা ১৬তম ওভার থেবে ১৩ রান তুলে নেন মোসাদ্দেক-আফিফ। এর মধ্যে শেষ দুই বলে উইকেটরক্ষকের দুই পাশ দিয়ে চোখ ধাঁধানো দুটি চার মারেন আফিফ। লক্ষ্যটা নেমে আসে ১২ বলে ১৫ রানে। ১৭তম ওভারে ফিফটি তুলে নেন আফিফ। ২৪ বলে তাঁর এ ফিফটি অনেক দিন মনে রাখবেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি।
চাতারার করা ১৭তম ওভারে ১০ রান আসায় জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল ৫ রান। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আফিফকে তুলে নেন মাদজিভা। ১ ছক্কা ও ৮ চারে ২৬ বলে ৫২ রানের স্মরণীয় ইনিংসই খেললেন তিনি। আফিফ ফেরার পর ৪ বলে দরকার ছিল ৩ রান। সাইফউদ্দিন এর মধ্যে প্রথম ২ বলেই জয় নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের। অপর প্রান্তে ২৪ বলে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক।
এর আগে টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারে কোনো ব্যাটসম্যানই সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। স্টাম্প ওপেন করে দিয়ে চাতারাকে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন (১৪ বলে ১৯)। এ সুযোগে ইয়র্কারে লিটনকে বোল্ড করেন চাতারা। সৌম্য শুরু থেকেই বেশ অস্থির ছিলেন। তারই খেসারত গুণে আউট হন তিনি। আগের ওভারেই উইকেট পড়েছে, তা ভুলে কাইল জার্ভিসকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য (৭ বলে ৪)। সবচেয়ে বড় আঘাতটা লেগেছে ওই ওভারের (চতুর্থ) চতুর্থ বলে। জার্ভিসের বাউন্সার সামলাতে না পেরে ক্যাচ দেন মুশফিক (১ বলে ০)। পঞ্চম ওভারে সাকিবকে (৩ বলে ১ রান) তুলে নেন চাতারা।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে বিপর্যয় মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির। কিন্তু নবম ওভারে প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহকে (১৬ বলে ১৪ রান) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রায়ান বার্ল। পরের ওভারে সাব্বির রহমান ফেরায় হার চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। মাদজিভার করা ১০ম ওভারের তৃতীয় বলে স্লগ চালিয়ে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে তুলে মেরেছিলেন সাব্বির। দৌড়ে এসে অবিশ্বাস্য ক্যাচে সাব্বিরকে (১৫ বলে ১৫ রান) তালুবন্দী করেন বার্ল। কিন্তু দুর্দান্ত এক জুটিতে বাংলাদেশকে স্বস্তির জয় এনে দিলেন আফিফ-মোসাদ্দেক।