বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামানের চুয়াডাঙ্গার পৈতৃক বাড়িতে দুই দফা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। তাঁকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি শামসুজ্জামান একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘উসকানিমূলক মন্তব্য’ করার প্রতিবাদে জেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ গত রাতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে শামসুজ্জামানের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা হয়।
শামসুজ্জামানের ভাই ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের দুটি অংশ গতকাল রাতে দুই দফা হামলা চালিয়ে বাড়ির আসবাব ভাঙচুর করেছে। হামলার সময় পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে শহরের কবরী রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে রূপ নেয়। ছাত্রলীগের সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহাবুল হোসেনসহ বিভিন্ন নেতা বক্তব্য দেন। তাঁরা শামসুজ্জামানকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা এ সময় শামসুজ্জামানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি শহীদ হাসান চত্বর থেকে দলীয় কার্যালয়ে ফেরার পথে শামসুজ্জামানের বাড়িতে হামলা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। ফাইল ছবিঅন্যদিকে, গত রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ হোসেনের নেতৃত্বে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাসের বাড়ির সামনে থেকে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শামসুজ্জামানের বাড়ির সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইমরান আহমেদ, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ দলীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা শামসুজ্জামানকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান। সমাবেশ শেষে শামসুজ্জামানের বাড়িতে ফের হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
শামসুজ্জামানের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামানের বাড়িতে কয়েকটা চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত পুলিশ সেখানে পৌঁছানোয় বড় ধরনের কিছু হয়নি।
শামসুজ্জামানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ হোসেন বলেন, শামসুজ্জামান সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। শুধু চুয়াডাঙ্গা কেন, বাংলাদেশের কোথাও তাঁর থাকার অধিকার নেই। গতকালের মিছিলে হাজার হাজার মানুষ ছিল। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে কেউ ভাঙচুর করলে করতেও পারেন।
শামসুজ্জামানের ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের প্রতিবাদে কাল শুক্রবার আবার চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।