দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থির। তবে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র রাজনীতির জেরে অস্থির থাকলেও, এবার ক্যাম্পাসগুলো অশান্ত হয়ে উঠছে খোদ উপাচার্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-প্রতিবাদে। উপাচার্যদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষকদের একাংশ।
উপাচার্যদের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং উচ্চশিক্ষার পরিবেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের কাছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়ন ও আধিপত্যবিরোধী তত্ত্ব চর্চা ও লড়াইয়ে তিনি সক্রিয়। এছাড়া দায়িত্ব পালন করছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুর্নীতির প্রসঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের দুর্নীতির যে খবর বেরিয়েছে, তা কোনো সরকারি সংস্থার তদন্তে নয়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশের প্রতিবাদের জের ধরেই এমন খবর প্রকাশ পায়। শিক্ষকদের একটি অংশও এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন আন্দোলন-প্রতিবাদ না হলে হয়তো এমন খবর প্রকাশ পেত না। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ হচ্ছে না, সেখানেও একই অবস্থা হয়তো। এতে অনেকেই স্তম্ভিত হচ্ছেন।’
‘যে প্রক্রিয়ায় একজন উপাচার্যকে নিয়োগ দেয়া হয়, সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দুর্নীতি খুবই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরাও ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকছেন। তার মানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যেই গণ্ডগোল আছে। ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চরম আনুগত্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। সরকার দলের প্রতি যে বেশি অনুগত তাকেই বাছাই করা হয়। অর্থাৎ একজন উপাচার্য নিয়োগের শুরুটাই খারাপ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। দুর্নীতি, অনিয়ম, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যে যার আপত্তি থাকবে না, তাকেই নিয়োজিত রাখা। এমন অনুগত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধান হলে যে পরিণতি হওয়ার কথা, এখন তাই হচ্ছে’- যোগ করেন এই অধ্যাপক।
দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য নিয়ে ছাত্রলীগ ভূমিকা রাখছে। সঙ্গত কারণে ছাত্রলীগের সব অন্যায় কাজে তাকে সম্মতি দিতে হচ্ছে। ছাত্রলীগ দুর্নীতি করছে, ভিসিরা সেই দুর্নীতির অংশীদার হচ্ছেন। এই অংশীদারিত্ব এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘটছে। ঠিক প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই একই চিত্র।’