অজু তিন প্রকার—ফরজ, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব।
যখন অজু করা ফরজ : অজু না থাকা ব্যক্তির জন্য চারটি অবস্থার যেকোনো একটির জন্য অজু ফরজ হয়।
♦ নামাজ আদায়ের জন্য, যদি নফল নামাজও হয়। (বুখারি, হাদিস : ১৩২)
♦ জানাজার জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৪৩৫)
♦ সিজদায়ে তিলাওয়াতের জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৪৩৫)
♦ পবিত্র কোরআন স্পর্শ করার জন্য। অনুরূপভাবে অজু ছাড়া ব্যক্তি যদি পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা দেয়াল, কাগজ, টাকা—যেটাই ছুঁতে চাইবে, তার জন্য অজু করা ফরজ। (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১১৩)
যখন অজু করা ওয়াজিব
শুধু একটি বিষয়ের জন্য অজু করা ওয়াজিব। তা হলো, কাবা ঘরের তাওয়াফ করা। (তিরমিজি, হাদিস : ৮৮৩)
যখন অজু করা মুস্তাহাব
♦ পবিত্রতার সঙ্গে ঘুমানোর জন্য। (বুখারি, হাদিস : ২৩৯)
♦ ঘুম থেকে জাগ্রত হলে। তখন শুধু মুস্তাহাবই নয়, বরং সুন্নাত (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৫৮৫)
♦ সব সময় অজু অবস্থায় থাকার জন্য। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৭৩)
♦ সাওয়াবের নিয়তে অজু থাকা অবস্থায় অজু করা।
♦ গিবত ও মিথ্যা কথার আশ্রয় নেওয়ার পর। (মুসলি, হাদিস : ৩৬০)
♦ মন্দ ও অশ্লীল কবিতা পাঠের পর। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৩৫)
♦ নামাজ ছাড়া অন্য অবস্থায় অট্টহাসি দেওয়ার পর। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯৩০১)
তবে নামাজে অট্টহাসি দিলে অজু ভেঙে যায়। (দারাকুতনি, হাদিস : ৬১৫)
♦ মৃতকে গোসল দেওয়ার পর। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৫১৬)
♦ মৃতের লাশ ওঠানোর জন্য। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৫০৩)
♦ প্রতি নামাজের জন্য নতুন অজু করা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৫০৪, বুখারি, হাদিস : ২০৭)
♦ ফরজ গোসল করার আগে। (বুখারি, হাদিস : ২৪০)
♦ গোসল ফরজ হয়েছে, এমন ব্যক্তির খাওয়া, পান করা ও ঘুমানোর আগে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬১)
♦ রাগের সময়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৫২)
♦ কোরআন তিলাওয়াতের সময়। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৪৩৫)
♦ হাদিস পড়া ও বর্ণনা করার সময়। (আদাবুল উলামা ওয়াল মুতাআল্লিমিনি : ১/৬)
♦ ইসলামী জ্ঞান অর্জনের সময়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭২৩)
♦ আজান দেওয়ার সময়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২১১)
♦ ইকামত দেওয়ার সময়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২১১)
♦ খুতবা দেওয়ার সময়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭২৩)
♦ মহানবী (সা.)-এর কবর জিয়ারতের সময়। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৬৪)
♦ ওকুফে আরাফা তথা আরাফায় থাকা অবস্থায়। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৪)
♦ সাফা ও মারওয়ায় সায়ি করার সময়। (বুখারি, হাদিস : ১৫১০)
অজুর আদব ও মুস্তাহাব
অজুতে এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আদায় করলে সওয়াব হবে, কিন্তু আদায় না করলে কোনো গুনাহ হবে না।
♦ অজু করার সময় উঁচু স্থানে বসা, যাতে পানির ছিটা গায়ে না আসে। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৫২)
♦ কিবলার দিকে বসে অজু করা। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৫২)
♦ অজু করার সময় অন্যের সাহায্য না নেওয়া। (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ১/২০০)
♦ প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৫২)
♦ অজু করার সময় রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত দোয়া পড়া। (সুনানে কুবরা লিননাসায়ি, হাদিস : ৯৯০৮)
♦ নিয়ত মুখে ও অন্তরে একসঙ্গে করা। (ফতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৮৭)
♦ উভয় কান মাসেহর সময় কানের ছিদ্রে ভেজা আঙুল প্রবেশ করানো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১২)
♦ প্রশস্ত আংটি নাড়াচাড়া করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৩)
♦ যদি আংটি প্রশস্ত না হয়, তাহলে অজু বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য তা নাড়াচাড়া করা আবশ্যক। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৩, আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৯)
♦ নাকের ময়লা দূর করার জন্য বাঁ হাত ব্যবহার করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১)
♦ যদি মুসল্লি এমন অপারগ না হয়, যার ফলে প্রতি ওয়াক্তে অজু করা আবশ্যক, তাহলে ওয়াক্ত আসার আগে অজু করা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১০২)
♦ অজু শেষ হওয়ার পর কিবলামুখী হয়ে এই দোয়া পাঠ করা—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহাদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাউওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বহিহরিন।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী বানিয়ে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৫০)
অজুর মধ্যে যেসব কাজ করা মাকরুহ
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অজুতে মাকরুহ—
♦ অজুতে পানির অপব্যয় করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯, আবু দাউদ, হাদিস : ৮৮)
♦ পানি ব্যবহারে অত্যধিক কার্পণ্য করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৬, মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)
♦ মুখের ওপর জোরে পানি মারা। (কানজুল উম্মাল : ৯/৪৭৩)
♦ দুনিয়াবি কথা বলা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/৯৮)
♦ অন্যের সাহায্য নেওয়া। (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ১/২০০) তবে অপারগ অবস্থায় অন্যের সাহায্য নেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৩৮৫৭)
♦ তিনবার মাথা মাসেহ করা এবং প্রতিবার পানিতে হাত ভেজানো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৬, কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৭০২৪)
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা, নবাবপুর, ঢাকা।