প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকালে চার দিনের সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছাবেন। প্রথম দুই দিন তাঁর সফরসূচি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনকেন্দ্রিক। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬টি চুক্তি ও এমওইউ সইয়ের জন্য বিবেচনাধীন রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে এর মধ্যে উভয় পক্ষের সম্মতিতে অন্তত ১০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আগামীকাল সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর নয়াদিল্লিতে আগামী শনিবার তাঁরা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছেন। নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে স্পষ্ট জানিয়েছেন, আসামে নাগরিক তালিকা হালনাগাদ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই। বাংলাদেশও জম্মু ও কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করাকে ওই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে। আসন্ন বৈঠকে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বড় কোনো অগ্রগতির আভাস মিলছে না। তবে তিস্তার বাইরে সাতটি নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়টি দুই দেশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নয়াদিল্লি ওই চুক্তি সইয়ের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ও প্রস্তুত। কিন্তু তিস্তা নদীটি যেহেতু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, সে জন্য ওই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করবে না ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই করার কথা থাকলেও দৃশ্যত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আপত্তিতে তা ভেস্তে যায়। তখন থেকেই তিস্তা চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, কেবল তাঁর সরকার ও শেখ হাসিনার সরকারই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে পারে। অঙ্গীকার সত্ত্বেও মোদি সরকার গত কয়েক বছরে চুক্তি সই করতে পারেনি। তবে অঙ্গীকার থেকে ভারত সরেও যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারত চাচ্ছে তিস্তা ইস্যুতে আটকে না থেকে অন্য নদ-নদীগুলোর পানিবণ্টনের বিষয়টি এগিয়ে নিতে। বিশেষ করে, গত ২০ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের পানিসম্পদ সচিবদের নেতৃত্বে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে ফেনী, ধরলা, দুধকুমার, মনু, খোয়াই, গোমতী ও মুহুরী—এই সাতটি নদীর পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সই করার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ওই নদীগুলোর তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা এখনো করা সম্ভব হয়নি। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হালনাগাদের কাজ শেষ হবে এবং তা স্বাক্ষরের জন্য উপযুক্ত হবে।’

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আগামী শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে ওই সাত নদীর পানিবণ্টনে চুক্তি সইয়ের জন্য তথ্য হালনাগাদ করার কাজ বেগবান করার তাগিদ দেওয়া হবে। যৌথ বিবৃতিতেও এ বিষয়টি উল্লেখ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’

নয়াদিল্লির সূত্রগুলো জানায়, এবারের শীর্ষ বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন না। পূজার কারণে তিনি এ সময়টা সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যান না। কয়েক দিন আগেই তিনি নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করে কলকাতা ফিরেছেন।

জানা গেছে, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের নয়াদিল্লি সফরে সাক্ষাৎ হচ্ছে না। প্রণব মুখোপাধ্যায়ও পূজার কারণে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন। সাধারণত নয়াদিল্লি এলে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।

এদিকে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আটটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।

সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্সূচি রয়েছে। সফর শেষে আগামী রবিবার প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরবেন।