ভারত থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বেড়ে গেছে পদ্মা নদীর পানি। সেই সঙ্গে যোগ দিলো বৃষ্টির পানি। এতে পদ্মা নদীর পানি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে।
পাবনার ছয় উপজেলায় দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল ডুবে গেছে। অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত অন্তত আট কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৪ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারত থেকে ধেয়ে আসা ঢলে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য শাখা নদী বড়াল, চিকনাই, গুমানিতে পানি বাড়ার কারণে অনেক এলাকা ডুবে গেছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন ও পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জেলার নয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
পাবনার জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত চারদিনে প্রতি ঘণ্টায় যে হারে পানি বাড়ছিল বুধবার থেকে সেভাবে বাড়ছে না। কিন্তু এখনো বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি।
তিনি বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে সদর উপজেলার হেমায়েতপুর, ভাড়াড়া, দোগাছি এবং চরতারাপুর সুজানগর উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, নাজিরগঞ্জ, মানিকহাট, সাগরকান্দি এবং সুজানগর পৌরসভার প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পানিবন্দিদের মাঝে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডালসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলার তিন ইউনিয়নে ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, পাবনা সদরের চার ইউনিয়নে ৬৫০ প্যাকেট, সুজানগর পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নে ২০ মেট্রিক টন চাল, ৪২০ প্যাকেট শুকনা খাবার জরুরিভাবে বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতির ওপর প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি রাখছে এবং এজন্য ইতোমধ্যে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদেরও এসময়ে স্টেশন ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাতে নয়-ছয় না হয় সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার ছয় উপজেলার কমপক্ষে দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে।
তিনি বলেন, বৃষ্টিতে আগেই নিচু এলাকার পেঁয়াজ, ডাল ও সবজিসহ অনেক ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরই মধ্যে গত চারদিনে পদ্মার পানি বেড়ে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ঈশ্বরদী, পাবনা সদর, সুজানগর, বেড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে ঈশ্বরদী, পাবনা সদর এবং সুজানগর উপজেলা। এসব এলাকার পেঁয়াজ, মাষকলাই, পেঁপে, গাজর, মুলা, মরিচ, কলা ও বেগুনসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের কিছু বিলাঞ্চলের বোনা আমন ধানও ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ফসলে কমপক্ষে ৩২ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদিত হতো এবং টাকার অঙ্কে কমপক্ষে আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান রানা সরদার বলেন, গেল কয়েক বছর পদ্মায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এবার ভারতীয় পানিতে সব তলিয়ে গেছে।
পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস বলেন, আমার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশে ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই পাকশীর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলসহ জমি। চরাঞ্চলের বাড়িঘর ডুবে গেছে। ওসব এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, উপজেলার সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধানসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীকুন্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া ও কামালপুরে।
সুজানগরের কৃষক রাসেল বলেন, পদ্মা পাড়ে আমার ১০ বিঘা জমিতে মাস কালাইসহ বোনা আমন ছিল। ভারতীয় ঢলে সব শেষ হয়ে গেছে। শত শত কৃষক এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।