বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের বাছাই এবং একই সাথে এশিয়ান কাপের বাছাই ম্যাচ হওয়ায় ম্যাচটির গুরুত্ব । শেষবার ২০১৪ সালে দুই দলের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। তখন র‍্যাংকিংয়ে ভারতের অবস্থান ছিল ১৭১। আজ ভারত আছে ১০৪ নম্বরে। এটাই ভারতের সেরা র‍্যাংকিং নয়; এমনকি গত বছর ভারত ৯৬ তেও অবস্থান করছিল। 

কীভাবে এই উন্নতি?
বাংলাদেশের একজন ফুটবল বিশ্লেষক মামুন হোসেন; যিনি বিগত দশকে দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল কাছ থেকে দেখেছেন। তার মতে ভারতের এমন উন্নতির পেছনে আছে ঘন ঘন ম্যাচ খেলা, ‘ওদের যে আগের কোচ ছিল, কনস্ট্যানটাইন, তিনি আসার পর টানা তিন বছর বিভিন্ন ধরণের ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছে। এভাবে তারা র‍্যাংকিংয়ের ওপর জোর দিয়েছে।’

টানা আড়াই বছরের মতো কোনো ম্যাচ হারেনি ভারত। মামুন হোসেন বলেন, ‘পরিকল্পনা করেই ম্যাচ খেলেছে ভারত, আগের কোচের পরিকল্পনা ছিল এটি। টানা নিজেরে কাছাকাছি শক্তিমত্তার দলের সাথে খেলার ফলেই ১০০ বা তার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ভারত।’

উয়েফা লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল হক বলেন, ভারতের মূলত এই উন্নতি ঘটে ইংলিশ কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের আমলে।এরপর ইউক্রেনিয়ান কোচ ইগর স্টিম্যাচ এখন ভারতের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া বিদেশি কোচদের প্রভাব একটা বড় ব্যাপার বলে মনে করেন, কলকাতা ভিত্তিক একজন ক্রীড়া সাংবাদিক জয়ন্ত চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, ‘ভারতের ফুটবলে উত্থানের পেছনে বিশেষ কারণ ভারতের দলটিতে বিদেশী কোচদের আবির্ভাব, তারা দলের প্রতি বেশ নিয়োজিত ছিলেন। দলের জন্য কাজ করেছেন ভেবেছেন কিভাবে কি করলে ফল আসবে।’

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের আলাদাভাবে লিগ নিয়ে কাজ করার কথাও বলেছেন জয়ন্ত চক্রবর্তী, ‘বিভিন্ন ক্লাব আইএসএলে বিদেশী খেলোয়াড়রা আসেন যারা বিশ্বকাপ খেলেছেন। এই যে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা আই লিগের দলে খেলেন না, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন চেষ্টা করে গেছে।’

ফুটবলার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া
ভারতের ফুটবল ফেডারেশন একদম ছোট বয়স থেকে ফুটবলার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে থাকে। জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘একদম মিল্কটিথ বয়স থেকে অর্থাৎ দুধের শিশুকে এই প্রক্রিয়ায় আনা হয়, তাকে গড়ে তোলা হয় একজন ফুটবলার হিসেবে যাতে সে ফুটবলকে ধ্যানজ্ঞান করে বেড়ে ওঠে।’

একটা বেশ চমকপ্রদ ব্যাপারও লক্ষ্য করা গিয়েছে যে ভারতের দলটিতে পার্বত্য অঞ্চলের খেলোয়াড় বেশি। জয়ন্ত চক্রবর্তীর মতে, পার্বত্য অঞ্চলের ছেলেদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তাদের কর্মক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে। তারা ভৌগলিক কারণেই বেশি সময় পরিশ্রম করতে পারে।

ফুটবল একাডেমি
ভারতের মতো বড় দেশের বিভিন্ন পর্যায় ফুটবলার উঠিয়ে আনার জন্য তারা ফুটবল একাডেমি তৈরি করেছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও তাদের শহরগুলোতে পৃথক ফুটবল একাডেমি গড়ে ওঠার কারণে ফুটবল সংস্কৃতি একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে গোটা দেশজুড়ে। এটাকে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচিং করানো মারুফুল হক, ‘ভারতের অনেকগুলো একাডেমি আছে, ফুটবলার অনুশীলন ও প্রযোজনা করার জন্য তারা কাজ করে থাকে।’

দুটো পেশাদার লিগ পরিচালনা

ভারতে ইন্ডিয়ান লিগ ও ইন্ডিয়ান সুপার লিগ অর্থাৎ দুটি প্রতিযোগিতা হয় যেখানে ভারতের ফুটবলারদের সাথে বিশ্বের নানা দেশ থেকে তরুণ ও একটু বয়স্ক আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের নিয়ে আসা হয়। যেখানে ফ্রান্সের ডেভিড ত্রেজেগে, ব্রাজিলের রবার্তো কার্লোস, ইতালির আলেজান্দ্রো দেল পিয়েরোর মতো ফুটবলাররা খেলেছেন। মারুফুল হক বলেন, ‘আইএসএল ও আইলিগে বিশ্বমানের ফুটবলাররা আসেন, ভারতের লোকাল প্লেয়াররা যখন তাদের সাথে খেলে অনেক কিছু শিখতে পারে, প্রতিযোগিতাও বেশ জোরদার হয় সেখানে।’

জনপ্রিয়তা
ভারতের ফুটবলের মান ও ফেডারেশনের প্রচেষ্টার কারণে জোনাল খেলা জয়, মোহনবাগান, চেন্নাই এমন প্রত্যেক অঞ্চলে ভালো দল আছে ফলে তাদের নিয়ে মাতামাতি হয় এবং যারা ফুটবল ভালোবাসে তারা খেলায় প্রতিযোগিতা অনুভব করে বলে মনে করেন মারুফুল হক।