জাতীয় নিরাপত্তায় এবার বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বিমানবন্দরে থাকবে অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম-এপিআইএস। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে যাত্রী বিমানে ওঠার আগেই তার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে গন্তব্য বিমানবন্দর। যে কোনো বিমানবন্দরে বোর্ডিং পাস করার সঙ্গে সঙ্গেই জানা যাবে যাত্রীর বিস্তারিত বিবরণ। প্রাথমিকভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ডিজিটাল পাসপোর্টে সাধারণত যাত্রীর নামঠিকানা-সংক্রান্ত তথ্য থাকে। যাত্রীর তথ্যসংবলিত এপিআইএস ডিভাইসে থাকবে তার মামলার বিবরণ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত তালিকায় নাম আছে কিনা, সে তথ্য। কোনো যাত্রী বিমানে ওঠার বোর্ডিং পাস করার পরপরই তার সব তথ্য চলে যাবে গন্তব্য বিমানবন্দরে। ফলে কোনো যাত্রীকে গ্রহণ করতে না চাইলে গন্তব্য বিমানবন্দরটি আপত্তি জানাতে পারবে যাত্রা শুরুর বিমানবন্দরে।
এভাবে সেখানেই তাকে আটকে দেওয়া যাবে। এ ছাড়াও গন্তব্য বিমানবন্দর থেকে কাউকে ফেরত পাঠানো বা আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া সহজ হবে। এ ব্যবস্থা দ্রুত চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে। সেখানে কার্যক্রমের কারিগরি দিক নিয়ে পর্যালোচনা হয়। পরামর্শ আসে যাত্রীর বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) সংরক্ষণের ব্যাপারেও। এসব নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কার্যালয়েও বৈঠক করার কথা ছিল। যদিও শেষ মুহূর্তে বৈঠকটি পিছিয়ে দেওয়া হয় অনিবার্য কারণ দেখিয়ে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, যাত্রীর আগাম তথ্য পাওয়ার মাধ্যমে বড় ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। বিমানবন্দরে শিগগিরই এ ব্যবস্থা চালু হবে। এ জন্য প্রস্তুতি-পর্যালোচনা চলছে।
জানা গেছে, এপিআইএস বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। তার আগে কী কী বিষয় সংযোজন করা দরকার এসব পর্যালোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বৈঠকে বলা হয়, কারিগরি দিক বিবেচনায় এটি সহজসাধ্য কাজ না হলেও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কীভাবে এপিআইএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এর আগে গত ২৩ ও ২৮ মার্চ দুদফা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এপিআইএসের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন ও খসড়া আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার কথা। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ৬ অক্টোবর তা উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড রেগুলেশনস) এপিআইএসের কারিগরি দিক তুলে ধরেন। সেখানে উঠে আসে জাতিসংঘ, আইকাওর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা। বৈঠকে বলা হয়, বায়োমেট্রিকের অভাবে বিস্তারিত তথ্য জানা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি করতে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সমন্বয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে।