রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আরো দুটি ট্যানারি পল্লী করতে যাচ্ছে সরকার। দেশে তিনটি চামড়া শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা হলে এই শিল্প আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারসহ (সিইটিপি) সার্বিক অব্যবস্থাপনার তিক্ত অভিজ্ঞতা যেন নতুন দুই নগরী প্রতিষ্ঠায় আমলে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাভারের ট্যানারি পল্লীর কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপির কাজ শেষ হবে। এরপর আগামী বছরের শুরুতেই লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জনের জন্য নিরীক্ষার আমন্ত্রণ জানানো হবে। বর্তমানে যে গতিতে চামড়া শিল্পনগরীর কাজ চলছে তাতে আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ চামড়া শিল্পের মান নির্ধারণকারী এই আন্তর্জাতিক সংস্থার সনদ অর্জনে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানায়, দেশে চামড়া শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে আরো দুটি ট্যানারি পল্লী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর একটি হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে। অন্যটি রাজশাহীর পুুঠিয়ার বানেশ্বরে। চট্টগ্রামে ৩০০ একর ও রাজশাহীতে ১০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আর্নেস্ট মানির টাকা জমা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে শিল্প সচিব আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সরকার সাভারের ট্যানারি পল্লীসহ আরো দুটি নতুন পল্লীর উদ্যোগ নিয়েছে। সাভার ট্যানারি পল্লীর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেসব নিয়ে কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়।’
শিল্প সচিব বলেন, ‘সাভারের ট্যানারি পল্লীর সিইটিপি পুরোপুরি কাজ করছে। এলডব্লিউজি সনদ অর্জনের জন্য এখন থেকে মক অডিট (প্রাক-নিরীক্ষা) পরিচালনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাই-প্রোডাক্ট উত্পাদনকারীদের অনুকূলে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া যেসব প্লটে এখনও ট্যানারি কারখানা স্থাপন করা হয়নি, সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে বাই-প্রোডাক্ট উত্পাদনকারীদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে। সাভার ট্যানারি পল্লী ব্যবস্থাপনার জন্য কম্পানি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিসিক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এটি পরিচালিত হবে। এতে সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে ছয়জন করে মোট ১২ জন প্রতিনিধি থাকবে।
বিসিকের পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার আমিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন চামড়া শিল্পনগরীর জন্য বানেশ্বর বিহারীপাড়া মৌজায় একশ’ একর জমি দেখা হয়েছে। গত অক্টোবরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমি মৌজার ম্যাপ করা, জমির মূল্য, জমির শ্রেনী নির্ধারণের জন্য বিসিকের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগামে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প নগরীতে ৩০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রায় ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের এই জমি উন্নয়নে আরো ১৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জমির জন্য বেজাকে আর্নেস্ট মানির টাকা জমা দেওয়া হবে।
এদিকে নতুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ সায়ফুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, এসব নতুন ট্যানারি পল্লী স্থাপনে সাভারের পল্লীতে সিইটিপি স্থাপনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে আবারো বিপদগ্রস্ত হতে হবে সব পক্ষকে। একইসঙ্গে তিনি সাভারের ট্যানারি পল্লীতে যেসব উদ্যেক্তা বর্জ্য শোধানাগার তৈরি করতে চায় তাদেরকে অনুমোদন দেওয়ার আহ্বান জানান।