বগুড়া শাজাহানপুরের মানিকদিপা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষসহ শ্রেণী কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির সুষ্ঠু সমাধানের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকগণও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই তালা ঝুলানো হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করেছে পরিক্ষার্থীরা। সেদিন থেকেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসছেন না।
এসএসসি পরিক্ষার্থীরা জানায়, মানিকদিপা দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬২ জন পরিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ ব্যবহারিক পরিক্ষার জন্য প্রতি পরিক্ষার্থীর কাছ দুইশত টাকা করে চায়। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা দিতে অস্বীকার করায় প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। বৃহস্পতিবার ছিল কেমিষ্ট্রি ও পৌরনীতি পরীক্ষা।
পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আমিরুল ইসলাম কক্ষে ঢুকে বেছে বেছে মানিকদিপা স্কুলের আরিফুল ইসলাম, আব্দুল ওহাব, মেহেদী হাসান, তানিয়া আকতার ও মমতাজসহ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র কেড়ে নেয়।
আল আমিন, মোজাহিদ, আরিফুল, ওহাব, মেহেদী, তানিয়া, সাদিয়া, মমতাজসহ সকল পরীক্ষার্থীরা জানায়, ব্যবহারিক পরীক্ষার টাকা না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ পরীক্ষা কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে করে পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে না।
পরীক্ষায় অকৃতকার্য করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তাছাড়া ফরম পূরণের সময় জোর করে চার হাজার পাঁচশত টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতি করার আশংকায় সে সময় কিছু বলা হয়নি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষককে এই বিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শহিদুল ইসলাম, ইউসুব আলী, তোতা মিয়াসহ অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইনসান আলী অসৎ চরিত্রের লোক। এরা পরামর্শ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কায়দায় টাকা দাবি করেন। তাদের বদ স্বভাবের কারণে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হতে বসেছে।
পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন তারা। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে পরিক্ষার্থীসহ অভিভাবকগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ না নিয়ে অফিস আওয়ার ছাড়া অভিযোগ নেওয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ তার কোনো এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন বলে ফোনে জানিয়েছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার আমিরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে পরীক্ষা কেন্দ্রের শান্তি-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব তার। পরীক্ষা চলাকালে কক্ষের ভেতর পরিক্ষার্থীরা হৈ চৈ ও সেটকোড মিলিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
এ সময় কয়েকজন পরীক্ষার্থীর খাতা নেওয়া হয়েছিল। কয়েক মিনিট পর আবার দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো কথা বা কোনো অভিযোগ উঠেনি। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ করে শিক্ষার্থীদের এই ধরনের অভিযোগ মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।