ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ও অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে নাম, নিশানা সব মুছে ফেলল। ভাষা আন্দোলন থেকে তাঁকে মুছে ফেলল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকেও তাঁকে মুছে দিল। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না—আজকে তা প্রমাণিত সত্য।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন দলীয় প্রধান। আলোচনাসভাটি হয়েছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
৩২ মিনিটের বক্তব্যের প্রায় পুরোটাতেই প্রধানমন্ত্রী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নানা প্রেক্ষাপট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এটুকুই বলব, ২১টা বছর, পঁচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত জাতির পিতাকে ইতিহাস থেকে সম্পূর্ণরূপে নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে শুরু করি। এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সেই নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না। আর যাঁর এত ত্যাগের মধ্য দিয়ে, জীবনটাকে তিনি সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের জন্য, তাঁর নামটা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা?’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেন সেই সময়ে আমাদের জীবনে নেমে এলো পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট। যারা পরাজয় বরণ করেছিল তারা প্রতিশোধ নিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য, যারা আমাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা, খাওয়াদাওয়া করত বা…সেই খুনি মোশতাকসহ তাদের দোসররা এবং জিয়াউর রহমান, এদের মদদদাতা, যে সঙ্গে না থাকলে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।’
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি থেকেও কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে যাননি। যখনই সুযোগ পেয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ছাত্রদের খবর পাঠিয়েছেন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যখন চিকিত্সারত অবস্থায়, সেখানে আমাদের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ গোপনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বসবে, সেটা ছিল বাজেট অধিবেশন, সেই অধিবেশন যখন বসবে তখন আন্দোলন করার জন্য, ধর্মঘট ডাকার জন্য। তখন একটা চাপ থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২৫ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীন আবারও ঘোষণা দিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। কাজেই সেই সময়ে জাতির পিতার যে নির্দেশনা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট করতে হবে, সেই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন মর্যাদা পাচ্ছে। এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আমাদের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। একসময় আমাদেরকে সবাই অবহেলার চোখে দেখত। শুনলেই বলত, দুর্ভিক্ষের দেশ, ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, জলোচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, দরিদ্রের দেশ। আল্লাহর রহমতে আর কেউ এটা বলতে পারবে না।’
একটাও মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে : সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে আলো জ্বালব। আরেকটি সিদ্ধান্ত দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করবে যে একটাও মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে। প্রতিটি গ্রামে খবর নিতে বলেছি, নদী ভাঙ্গায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের আমরা ঘর করে দেব। আর যারা ভূমিহীন, গৃহহীন তাদের আমরা ঘর তৈরি করে দেব।’
বক্তব্যের শেষভাগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের জন্য রক্ত দিয়ে, যারা রক্তের অক্ষরে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল আর যাদের পথ অনুসরণ করেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, সেই ত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। বৃথা যেতে আমরা দেব না। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখক হায়দার আলী খান। আলোচনাসভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।