বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এসব স্যানিটাইজার ঝুঁকিতে থাকা শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

কিন্তু বোতল, কেমিক্যালসহ কাঁচামালের অভাবে স্যানিটাইজার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা জীবানুরোধক হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, পরিবেশবাদী যুব সংগঠন ‘গ্রীন ভয়েস’, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঁচামাল সংকট।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, গ্লিসারিন, লেমন ওয়েল ও ডিস্টিলড ওয়াটার ব্যবহার করে এই স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। এরপর তা বোতলজাত করে বিনামূল্যে (ফ্রি) সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রথমত এই কাঁচামালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বোতলও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন ও বিতরণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রস্তুত থাকলেও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

‘গ্রীন ভয়েস’-এর উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের স্যানিটাইজার উৎপাদন প্রকল্পের কাজ চালানোর ক্ষেত্রে বোতল, কেমিক্যালসহ অন্যান্য কাঁচামালের সংকট ও উচ্চমূল্য বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর অর্থ সংকট তো আছেই। তাই দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের কথা বিবেচনায় নিয়ে কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তায় সকলে এগিয়ে আসতে হবে।

অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখে দিতে ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান যুব ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই উপকরণগুলো কিনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু বোতল ও কেমিক্যাল সংকট বাধার সৃষ্টি করছে। সবার সহযোগিতা পেলে যুব ইউনিয়ন ১০ লাখ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ করবে বলে তিনি জানান।

‘মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাবো, মানুষের দেয়া প্রাণ’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে স্যানিটারিজ কার্যক্রম শুরু করেছে উদীচী কর্মীরা। রাজধানীর তোপখানায় সংগঠন কার্যালয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু বোতলের অভাবে কার্যক্রম ধীরে চলছে বলে জানালেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। তিনি বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ছাড়াও উদীচীর পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজধানীর লালমাটিয়ার ডি ব্লকের একটি ভবনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনের কাজ করছেন গ্রীন ভয়েস-এর কর্মীরা। উৎপাদিত স্যানিটাইজার বিতরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা নিম্নআয়ের মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সবচেয়ে বিপাকে থাকা শ্রমজীবী মানুষের জন্য সংগঠনের পক্ষ খেকে খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী আলমগীর কবির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শহীদ মুনীর চৌধুরী কনফারেন্স হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা। এ কাজে সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে তাদের কার্যক্রম।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সাবান, টিস্যু, খাবার স্যালাইন, হ্যান্ড গ্লাভস ইত্যাদি বিতরণ শুরু করেছে জুম বাংলাদেশে ফাউন্ডেশন। গত তিন দিন ধরে পথশিশু, বস্তিবাসী ও সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওইসব সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।