পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এখন করোনাভাইরাস নয়, করোনা-আতঙ্কে আক্রান্ত। উদাহরণ দিই-বিশ্বের জনসংখ্যা এখন ৭৫৩ কোটি। আর নিবন্ধটি যখন লেখা হচ্ছে ( ২৭ মার্চ, সকাল ১০:৩০মি) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ৩২ হাজার ২৫৭।

তার মানে পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ০.০০৩৩% মানুষ এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

যাদের মধ্যে আবার প্রায় দেড়লাখ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন (১,২৪,৩৩২ জন) সাড়ে তিনলাখের (৩,৬৪,২০৬) বেশি মানুষ সামান্য অসুস্থতা নিয়ে এখনো আক্রান্ত আছেন। কিন্তু এরা সবাই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কারণ পরিসংখ্যান বলে- এ রোগটিতে আক্রান্তের ৯৫ ভাগই মাইল্ড বা ‘মৃদু’ আক্রমণের কবলে পড়েন।

লক্ষণ প্রকাশের দু/তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর লক্ষণ বলতেও জ্বর, কাশি, গলাব্যথা আর সামান্য দুর্বলতাবোধ- ব্যস এই। (তথ্যসুত্র: সাইকোলজি টুডে, ২৮ ফেব্রুয়ারি) মাত্র ৫% মানুষ (এ মুহূর্তে ১৯৬৩৫ জন) ‘সিরিয়াস’/‘ক্রিটিকাল’ বা সংকটাবস্থায় যান। তারা সুস্থ হতে পারেন, আবার ভিন্ন কিছুও হতে পারে।

কিন্তু পৃথিবীর জনসংখ্যার তুলনায় হারটা কত? মাত্র ০.০০০০২৫%!

সড়ক দূর্ঘটনা, হৃদরোগ বা আত্মহত্যায় ঢের বেশি লোক মারা যায়। পৃথিবীতে প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায়ই মারা যায় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ। হৃদরোগে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর মারা যায় আট লক্ষ মানুষ (তথ্যসুত্র: আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন)। আর প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে (তথ্যসুত্র: ডব্লিউএইচও)!

বুঝতেই পারছেন- করোনাভাইরাস নিয়ে যে আতঙ্ক গ্রাস করছে আমাদের, তার ভগ্নাংশ আতঙ্কও যদি মৃত্যুর এই কারণগুলোর ব্যাপারে থাকত, তাহলে বহু মানুষকে আমরা বাঁচাতে পারতাম।

ইনফ্লুয়েঞ্জাতে কত লোক আক্রান্ত  হয়?
বলবেন- এসব রোগ আর করোনা এক হলো? ‘প্যানডেমিক’ বা বৈশ্বিক মহামারী (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে) বলে কথা। ‘কোভিড-১৯’ বা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ’টি আসলে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার এক নতুন ধরণ যা এর আগে মানুষের মধ্যে দেখা যায় নি। তো এই ফ্লু-তে (শীতের শুরুতে এবং শেষে, যাকে সিজনাল ফ্লু বলা হয়) কত মানুষ আক্রান্ত হয়? ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ! (তথ্যসুত্র: সাইকোলজি টুডে, ২৮ ফেব্রুয়ারি)

এবং এ সংখ্যাটা জানা যাচ্ছে, কারণ এ মানুষেরা চিকিৎসক বা হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। সাধারণ মাত্রায় ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে যারা ডাক্তারের কাছে যানই না (এবং বেশিরভাগ মানুষই তা করেন), তাদের হিসাব ধরলে সংখ্যাটা কত বড় হয়!

ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যু বনাম করোনায় মৃত্যু
শুধু তাই না। সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানেন? ২,৯০,০০০ থেকে ৬,৫০,০০০ মানুষ! (তথ্যসুত্র: সাইকোলজি টুডে, ২৮ ফেব্রুয়ারি) এবং এ মৃত্যু যে শুধু গরীব দেশগুলোতেই হয়, তাই না। ধনী দেশগুলোতেও হয়। ২০১৪-১৫ সালে বৃটেনে সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা যায় ২৮ হাজার মানুষ। (তথ্যসুত্র: পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড; আইটিভি, ৬ ফেব্রু, ২০২০)। ২০১৬-১৭-তে ফ্রান্সে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা যায় ১৪ হাজার মানুষ। (তথ্যসুত্র: দ্য কানেক্সিয়ান, ২১ মার্চ, ২০২০)। ২০১৭-১৮তে যুক্তরাষ্ট্রে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা যায় ৬১ হাজার মানুষ। (তথ্যসুত্র: সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন)।

অথচ এই তিনটি দেশে গত তিনমাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা : বৃটেন- ৫৭৮, ফ্রান্স-১৬৯৬ এবং যুক্তরাষ্ট্র-১৩০০ (২৭ মার্চ, দুপুর ১২:০৪মি) আর সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৪,০৯৫ জন (২৭ মার্চ, দুপুর ১২:৪০মি। এদের একটা বড় অংশই আগে থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এমন বৃদ্ধ মানুষ।

করোনা-আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন না
করোনা-আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন-ব্যাপারটা তা নয়। তবে রোগটি বেশ সংক্রামক আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে খুব দ্রুত এটি অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। তাই প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতা…

-সাথে সবসময় এক বা একাধিক রুমাল রাখবেন যেন হাঁচি-কাশি আসার সাথে সাথে এটা ব্যবহার করতে পারেন।

-নিয়মিত ঘন ঘন হাত ধোন। পরীক্ষায় দেখা গেছে ভালোভাবে হাত ধুলে এই জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার না হলেও চলবে। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান (‘বাংলা সাবান’) বরং আরো ভালো।

-বাইরে বের হতে হলে অন্যদের কাছ থেকে তিনফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।

-আপনি অসুস্থ না হলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলে। কিন্তু যদি করেন তবে সেটা যথাযথ নিয়ম মেনেই করতে হবে।

-জ্বর বা এজাতীয় লক্ষণ দেখা দিলে কোয়ারেন্টিনে থাকুন। একা থাকার এ নিরবচ্ছিন্ন সময়কে গ্রহণ করুন জীবনের এক অসাধারণ উপলব্ধির সুযোগ হিসেবে।