নিজস্ব প্রতিবেদক


কুমিল্লার দেবীদ্বারে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ১৫ বছর বয়সী এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সকার সাড়ে ১১টার মধ্যে দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের রাজামেহার গ্রামের মূন্সী বাড়িতে।
ওই ঘটনায় ভিক্টিম প্রতিবন্দী’র মা বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় ২০০০সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (৩)’র ৯(১)’র ধারায় মাওলানা বদিউল আলম মূন্সী(৫২) কে এক মাত্র আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২০, তাং- ৩১/০৩/২০২০ইং।
দেবীদ্বার থানা পুলিশ বুধবার সকালে অভিযুক্ত মাওলানা বদিউল আলম মূন্সী(৫২)কে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করেছেন। একই সাথে ভিক্টিমের ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছেন। অভিযুক্ত মাওলানা বদিউল আলম মূন্সী রাজামেহার ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক।
বাদী তার মামলায় উল্লেখ করেন, গতকাল ৩১/০৩/২০২০ইং তারিখ সকাল সাড়ে ১১টায় অভিযুক্ত রাজামেহার গ্রামের মৃত: কফিল উদ্দিন মূন্সীর ছেলে বদিউল আলম মূন্সী(৫২) একই বাড়ির পাশের ঘরের বুদ্ধি প্রতিবন্দী ভিক্টিম (১৫)কে তার নিজ ঘরে সকলের অগচরে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। মামলায় ওই অভিযুক্ত কে শিক্ষককে চরিত্রহীন আখ্যা দিয়ে বাদীনী মমলার এজহারে বলেন, সকাল ৮ টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাজামেহার বাজারে যান, ওখান থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় বাড়ি এসে দেখেন তার মেয়ের সেলোয়ার কামিজ খোলা এবং অভিযুক্ত বদিউল আলম মূন্সী ঘর থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতে দেখেন। ওই ঘটনার পরই ভিক্টিমের মা দেবীদ্বার থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস,আই) মিঠুন সিংহ জানান, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। ভিক্টিমের ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর এবং তদন্তের পরই ঘটনার সত্যতা জানা যাবে।
এব্যপারে রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহিরুল ইসলাম মূন্সী জানান, ঘটনাটি স্পশর্কাতর, ভিক্টিমের মায়ের স্বাক্ষতেই মামলা হয়েছে। আশেপাশের লোকজন বা প্রতিবেশীদের কেউ এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এলাকায় কথা বলে জেনেছি। অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম মূন্সী একজন ভালো মানুষ হিসেবে এলাকার সকলেরই দাবী। ভিক্টিম এবং অভিযুক্ত সম্পর্কে চাচাতো জেঠাতো ভাই বোন। আমি নিজেও তাদের প্রতিবেশী। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন জমি সংক্রান্তে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে। ভিক্টিমের বাবা বার্ধক্য জনিত কারনে অনেকদিন পূর্বেই মারা গেছেন। তার অনেক সম্পত্তিও ছিল। ভিক্টিমের মা’ তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল। তার মা’কে নিয়ে অনেক সালিস হয়েছে। একাধিকবার অবৈধ সম্পর্কের কারনে তাকে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে বাড়িতে এসে পুনরায় জমিসংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। তবে যতদূর শোনেছি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটি তার মায়ের সাথে থাকা অবস্থায় এলাকায় ও ঢাকাতে একাধিক ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও রাজামেহার ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি এডভোকেট আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার, তিনি বুধবার বিকেলে সেল ফোনে জানান, অভিযুক্ত বদিউল আলম মূন্সী একজন ধার্মিক লোক। জমিজমা নিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ চলমান। তাছাড়া ভিক্টিমের মা’নানা অপরাধে যুক্ত থাকার কারনে একাধিকবাট সালিসে তাকে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছিল। তার দ্বারা সাজানো কিছু কিনা তা তদন্তের উপর নির্ভর করছে। সঠিক তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসবে আশাকরি। এজাতীয় ঘটনা বা চক্রান্ত ওই মহিলার দ্বারাই সম্ভব। মামলা ও আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় থাকায় সত্য মিথ্যা নিয়ে মন্তব্য করা খুবই কঠিন। এখন করোনা আতঙ্কে আছি। মৃত্যুর পর জানাযাও পাওয়া যায়না, কেন মানুষ ওসব ভুলে যায়। স্বার্থ উদ্ধারে মানুষ এতো নিচে নামতে পারে কল্পনাও করতে পারিনা। প্রশাসনের কাছে আমার দাবী থাকবে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সহ ডিএনএ পরীক্ষায় আসল সত্য বের করে আনা হোক। মেয়েটি যাতে সঠিক বিচার পায় এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনে দোষি যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আনোয়ারের সাথে বুধবার বিকেল পৌনে ৫টায় সেল ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এলাকার অনেকেই সাজানো ঘটনায় একজন ভালো মানুষ কে ফাঁসানো হয়েছে দাবী করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।