আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিসের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রমজানে দুপুর সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে যথারীতি শুক্র ও শনিবার।

মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে এ বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করার সময় এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং  অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান—এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে।

সুপ্রিম কোর্ট ও এর আওতাধীন সব কোর্টের সময়সূচি সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ বা ২৫ এপ্রিল থেকে মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, গার্মেন্ট শ্রমিকরা কেন সরকারি ঘোষণা ছাড়াই দুই দিন আগে ঢাকায় ফিরে আসা শুরু করেছিল—এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসকে গার্মেন্ট মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। সরকারি নির্দেশনার বাইরে কেউ যেন ঢাকায় না আসে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

গার্মেন্ট মালিকদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শুধু নিজেদের লাভের দিকটা চিন্তা করে। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় না করে গার্মেন্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে শ্রমিকদের অনেকে ঢাকায় চলে এসে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়িয়েছে।

মন্ত্রিসভার অন্য একটি সূত্র জানায়, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী ও অ্যাসিড মামলার মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়, কিন্তু ২০ বছরের বেশি জেলে আছেন—এমন কয়েদিদের মুক্তি দিয়ে জেলখানায় করোনা ঝুঁকি কমানোর দিকটি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন একটি তালিকা আগে থেকেই করা আছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরো কয়েকটি বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণঞ্জ, মাদারীপুর ও গাইবান্দা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন।

এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী যেকোনো ধরনের কড়া পদক্ষেপ নিতে পিছপা না হতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, যেখানেই আক্রান্তের খবর আসবে সেখানেই বেশি কড়া লকডাউন থাকবে। ঢাকায় কেউ যেন ঢুকতে না পারে, বের হওয়ারও দরকার নেই। মানুষকে আগে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে, এরপর সব কিছু। তবে সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় মানুষকে আস্থায় নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সাধারণত প্রতি সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা সচিবালয়ে দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মন্ত্রিসভার বৈঠক বসলেও গতকাল গণভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মাস্ক পরে, দূরত্ব বজায় রেখে এবং যাঁদের এজেন্ডা ছিল সেসব মন্ত্রীকে নিয়েই সীমিত পরিসরে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। সূত্র : বাসস ও ইউএনবি।