পাইকারি বাজারে প্রতিবছরই রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু হয় শবেবরাতের পর একসাথে কেনার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয় দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা। আর সিন্ডিকেট মিলে চলে রমজানের পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজি। তবে এবার পুরোটাই ব্যতিক্রম। এবার শবেবরাত পার হয়ে যাওয়ার পরও রমজানের পণ্যের ক্রেতার দেখা মিলছে না পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই।

কেন এমনটি হচ্ছে জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ী খুচরা দোকানি নাসির অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক  নাসির উদ্দিন বলছেন, ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরুর অন্তত চারদিন আগে থেকে বাজারে ভোগ্যপণ্যের ব্যাপক বিক্রি হয় আমাদের খুচরা দোকানগুলোতে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হলে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিবে-এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই অজুহাতে প্রচুর পণ্য কিনে রাখে লোকজন।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমার দোকানে নিয়মিত কাস্টমারের বাইরে প্রচুর লোক এসেছে যারা অন্তত তিনমাসের ভোগ্যপণ্য কিনে নিয়েছেন। ক্রেতাদের এমন আচরণ দেখেই তখনই আমরা আঁচ করেছিলাম ‘রমজানের পণ্য বিক্রি এখনই শেষ’। শবেবরাতের পর এসে ঠিকই প্রমানিত হলো এখন কোনো বেচাকেনা নেই।

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৫ এপ্রিল শুরু হবে পবিত্র রমজান। আর শবেবরাত পালিত হয়েছে গত ১০ এপ্রিল।

ভোগ্যপণ্য বিক্রিতে দেশের সবচে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো সাধারণ ছুটির মধ্যেও প্রায় খোলা আছে। শুরু থেকেই খোলা রাখা হয়েছে আদা-রসুন-পেঁয়াজের মতো কাঁচাপণ্য বিক্রির আড়তগুলো। রমজানের তিনমাস আগে থেকেই রমজানের ভোগ্যপণ্য আমদানি করে মজুদ করে রাখতেন আমদানিকারকরা। আর পাইকারি বাজারে এসব পণ্য বিক্রি শুরু হতো শবেবরাতের দুদিন আগে থেকে পরবর্তী ৪/৫দিন পর্যন্ত। কিন্তু এখন খাতুনগঞ্জে পুরো উল্টো চিত্র।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদও স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের আড়ত খোলা রাখলেও বিক্রি হচ্ছে কেবল ডাল, চাল পণ্য। মূলত ত্রাণের জন্য এসব পণ্য কিনছেন বলেই চাহিদা বেশি। কিন্তু শবেবরাতের পর রমজানের যে পণ্যের বিক্রি চলে এখন তার কিছুই নেই।

ছগীর আহমদ বলছেন, এর দুটি কারণ থাকতে পারে, একটি হচ্ছে সাধারণ ছুটির আগে বিপুল পণ্য কিনে মজুদ করেছেন ভোক্তারা; ফলে ভোক্তা কম থাকায় খুচরা দোকানে বিক্রি নেই। আরেকটি কারণ হচ্ছে, চাহিদা কম থাকায় খুচরা দোকানিরা পাইকারি বাজারে আসছেন না। এতে করে রমজানের যেই বেচাকেনা সেরকম নেই। আর চারিদিকে সবাই ঘরবন্দি থাকায় চাহিদাও কমেছে।

তবে কিছুটা ভিন্নতম প্রকাশ করে খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশ কালের কণ্ঠকে বলেন, আজকে থেকে রমজানের পণ্যের বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। আজকে বাজারে এসেছেন শহরের মধ্যের থাকা খুচরা দোকানিরা। দূরের খুচরা দোকানি বা চট্টগ্রাম সিটির বাইরের লোকজন এখনো আসেননি। আশা করছি আগামী কদিনে তারাও পণ্য কিনতে আসবেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরবরাহ সংকটের অজুহাতে রমজানের কয়েকটি ভোগ্যপণ্যে দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। এরমধ্যে মসুর ডাল ও ছোলা অন্যতম। খাতুনগঞ্জের আড়তে গতকাল অস্ট্রেলিয়ার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭৫ টাকা কেজি। সরকারি ছুটি শুরুর আগে দাম ছিল কেজি ৬৫ টাকায়। মসুর ডাল দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, কর্মহীন মানুষদের ত্রাণ হিসেবে সবাই এই পণ্য কিনছেন। তাই বাজারে চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সেই পরিমাণ সরবরাহ নেই। আর বাজারে রমজানের সবচে বিক্রিত পণ্য ছোলা বিক্রি হচ্ছে মনে ২৩৫০ টাকায়। ছুটি শুরুর আগে এই পণ্যের দাম ছিল মণ ২২৫০ টাকা।