সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা কর্মস্থল এলাকায় উপস্থিত নেই তাঁদের তালিকা ঢাকায় পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কড়া নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এমন নির্দেশ বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনাররা এটি ডিসিদের কাছে পাঠিয়েছেন। ডিসিরা সেই নির্দেশনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পাঠিয়েছেন। অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা কবে পাঠাতে হবে সেটি নির্ধারণ করে দেয়নি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
একাধিক জেলার ডিসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাঁদের কাছে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। কর্মস্থলে যাঁরাই অনুপস্থিত থাকবেন তাঁদের তালিকা পাঠানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনুপস্থিতদের তালিকা পাঠানোর কোনো তারিখ উল্লেখ করেনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠ প্রশাসনে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘জেলা পর্যায়ের অফিসারদের উপজেলাভিত্তিক এবং উপজেলা পর্যায়ের অফিসারদের ইউনিয়নভিত্তিক সংযুক্ত করে কাজে লাগান। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত নেই তাঁদের তালিকা তৈরি করে পাঠান।’
আরেকজন বিভাগীয় কমিশনার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি কর্মচারীরা ছুটিতে থাকলেও কর্মস্থল এলাকায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন দুই জায়গা থেকে অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এমন জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা যদি বেতনভুক্ত লোকজনই না মানেন তাহলে শাস্তির বিকল্প নেই।
অন্যদিকে কড়া এ নির্দেশনার কারণে বিপাকে পড়েছেন কর্মস্থল এলাকা ছেড়ে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সুনামগঞ্জের একটি উপজেলার একজন উপসহকারী প্রকৌশলী কালের কণ্ঠকে বলেন, লম্বা ছুটি পেয়ে না বুঝেই বাড়িতে (রংপুরে) চলে এসেছিলেন। অবস্থা যে এমন হবে তা অনুধাবন করতে পারেননি। যান চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে কিভাবে ফিরবেন তা বুঝতে পারছেন না।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এমন নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এমন সময়ে যাঁরা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কর্মস্থল এলাকায় নেই তাঁদের জন্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। তাঁদের বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হতে হবে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এরই মধ্যে মাদারীপুর থেকে এমন কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। দোষী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশির ভাগ সময়ই আরামে কাজ করেন। এমন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতেও বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও যাঁরা কর্মস্থল এলাকায় থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি তাঁদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতিটি উপজেলা থেকে ইউএনওরা জেলায় তালিকা পাঠাবেন, জেলা প্রশাসন সেটি বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাবে। এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে অনুপস্থিত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার শিবচর উপজেলার ১১ জন কর্মকর্তার তালিকা মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কর্মকর্তারা যে যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত সেই মন্ত্রণালয়গুলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছুটি চলছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি সপ্তাহে আবারও ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ছুটি চলাকালীন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাঁদের কর্মস্থল এলাকায় থাকতে একাধিকবার আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এই ছুটি বা বন্ধকালে অবশ্যই নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন’। বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন দেশে।