আগুনে পুড়িয়ে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আওয়ামী লীগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।


সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আদর্শ নাগরিক আন্দোলন’-এর তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ড. মোশাররফ বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঘটে গেল নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড। কারা এটা করেছে? আওয়ামী লীগ। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও স্বীকার করেছে- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জড়িত। সেখানকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যে হত্যাকাণ্ড সারা জাতিকে এত নাড়া দিল সেখানে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগ বলে আজকে তাকে গ্রেপ্তার হয় না।’


তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র না থাকলে দেশে কী হয় তা আমরা দেখছি। বাংলাদেশকে ধ্বংস করার সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। কোথাও স্বস্তি নেই। দেশে এখন জনগণের অধিকার, জনমতের অধিকার, লেখার অধিকার, বলার অধিকার নেই। আমাদের এখন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, বাংলাদেশ এখন কোন পথে যাচ্ছে!’

নুসরাতের গায়ের আগুন লাগানোর পরের ঘটনা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কারা মিছিল করল এই ধর্ষকদের পক্ষে, এই অত্যাচারির পক্ষে; আওয়ামী লীগ। আবার উচ্চস্তরে নানাভাবে কথা বলা হচ্ছে যে, এটা মাদ্রাসায় হয়েছে, এটা বাতিল করে দেওয়া হোক কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর কটাক্ষ করা হচ্ছে। এই ঘটনাতো ঘটিয়েছে ব্যক্তি। সেই ব্যক্তি কে? আওয়ামী লীগের লোক। আমি বিশ্বাস করি সে (ধর্ষক) যদি আওয়ামী লীগ না করতো, উলামা লীগ না করতো এই ধরনের নিঃসংস্ব কাজ কারও পক্ষে করা সম্ভব হতো না। আজকে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে, সরকারকে বুঝতে হবে যে, সমাজকে পুরো কুলষিত করে দেয়া হয়েছে সামাজিকভাবে, নৈতিকভাবে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আজকে চতুর্দিকে কী হচ্ছে? গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই সরকার এই আওয়ামী লীগ দেশের প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ছেলেদেরকে, যে যুবকদেরকে, যে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগকে নিয়ে এত বড় অপকর্ম করিয়েছে নির্দেশ দিয়ে। তাদের কাছ থেকে কীভাবে আমরা নৈতিক আচরণ আশা করব। আজকে প্রশ্ন এসে যায়- বাংলাদেশ কোন পথে। নৈরাজ্যের পথে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। নেই বলে কথা বলার অধিকার নেই। সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি কোনো মন্তব্য করেন তাও যদি সরকারের বিরুদ্ধে যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ আসলে অন্ধকার গহ্বরে নিপতিত। বাংলাদেশকে ধ্বংস করার সব রকমের প্রচেষ্টা করছে, এই রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল আয়োজন করছে।’

খালেদা জিয়ার মামলার জামিন নিয়েও সরকারের ‘টানবাহানা’ কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক দেশে দুই আইন। সরকারি দলের জন্য আইনের একরকম প্রয়োগ আর বিরোধী দলের জন্য অন্য রকম।’

সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামিক পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. এজাজ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের ‍মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।