লেখক আদিল মাহমুদ

সৃষ্টিকর্তা পৃথিবী ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং অবনীমন্ডলে আদমির জন্য শোভনীয় বিভিন্ন প্রানী, উদ্ভিদ, অনুজীব,ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সহ আরো অনেক কিছুই রচনা করেছেন।কোন কিছুই তিনি মনুজের অকল্যাণে তৈরি করেননি।

কিছু কিছু প্রাণী, অনুজীব, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, জৈব ও অজৈব, ধাতু ও অধাতু তেজস্ক্রিয় ইত্যাদি আল্লাহ্ মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করলেও অধিলোকের সেরা সৃষ্টি তা মেনে নিতে পারে নাই। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হাইড্রোজেন ও পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, জঙ্গি বিমান, সাবমেরিন, নৌবহর, জীবাণু অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র এবং আজকের মহামারী ভাইরাস। যে ভাইরাসটি অর্থাৎ কোভিড-১৯ কে আমরা এতো ভয় পাচ্ছি, যেটি আমাদেরকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে, হয়তোবা এটিও মহান সৃষ্টিকর্তা নরের কোন ভুলের জন্যই পাঠিয়েছেন।মনুষ্যের কোন না কোন ভুল কিংবা পাপের ফসল স্বরূপ আজ এটি মরনঘাতীতে পরিনত হয়েছে। ভাইরাস নিয়ে মানুষ আজ অধিক চিন্তাগ্রস্ত এবং চিন্তিত হওয়াই স্বাভাবিক। পরিকল্পনার উপর পরিষেবা চলছে, শুধু মাত্র বাঁচতে এবং বাঁচানোর জন্যে। অথচ ভাইরাসের চেয়ে অনেক গুণ শক্তিশালী মানুষ কর্তৃক সৃষ্টি পারমাণবিক ও হাইড্রোজেন বোমা যা নিমেষেই ধ্বংস করে দিতে পারে সাত শত কোটির মতো মানুষকে। স্রষ্টার সৃষ্টি, স্রষ্টা নিজে নিঃশেষ করলে কষ্ট হলেও বলার কিছু থাকে না। কিন্তু স্রষ্টার ফুল মানুষ ধ্বংস করে ফেলবে তা মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর। সৃষ্টিকর্তা, মানুষের বাঁচার সুবিধার্থেই অখিলে বায়ুমণ্ডল ও গাছপালা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কয়েক অকৃতজ্ঞরা নিজেদের লিপ্সা চরিতার্থে সেই নিয়ামত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। কেউ কেউ এই সংক্রান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও নোবেল পুরস্কারই তার সমাধান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কার্যত সব চেষ্টাই বিফল। সুইডেনের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা থানবার্গ বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা ভহাবহ পর্যায়ে পৌছার বিরুদ্ধে যে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছেন তা নরের জন্য একটি শিক্ষা মূলক উদাহরণ।

লক্ষ্য করে দেখুন, মানব জাতির সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত যত মানুষ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমণে কিংবা রোগ ব্যাধিতে মারা গেছে তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি মানুষ নিহত হয়েছে নিষ্ঠুরতম মানুষেরই হাতে। যেমন, গ্রীসের আলেকজান্ডার দা গ্রেট(বি,সি-৩৫৬), চীনের কিন শি হুয়াং(বি,সি-২৪৭), রোমান ক্যালি গুলা(৩৭-৪১ সি), রোমান আতিলা দ্য হান(৪৩৪-৪৫৩ সি), চীনের উ জেতিয়ান সম্রাজ্ঞী(৬৯০-৭০৫ সি),মোঙ্গোলিয়ার চেঙ্গিস খান(১২০৬-১২২৭ সি), এই নরঘাতক চেঙ্গিস খান,মুসলিম ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করেছিল এবং চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল, মঙ্গোলিয়ার হালাকু খান(১২৫৮ সি),তুর্কি-মঙ্গল সেনাধ্যক্ষ তৈমুর লং(১৩৭০-১৪০৫ সি), রোমান ভ্লাদ-৩ (১৪৫৮-১৪৭৬ সি), ফ্রান্সের নেপোলিয়ান বোনাপার্ট (১৭৬৯সি)খান, জার্মানির এডলফ হিটলার(১৯৩৯ সি), প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধর্ম যুদ্ধ এবং বর্নবাদ বৈষম্যে। একবার মনখুলে ভেবে দেখুন তো–মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করা বেশি অপরাধ নাকি ভাইরাস কর্তৃক মানুষ হত্যা বেশি অপরাধ? তাও আবার নিজেদের ভুলে। একটি উদাহরণই যথেষ্ট, যথা বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসেই ত্রিশ লক্ষ নিহত(শহীদ) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক, তারাও কিন্তু মানুষ, তার উপর মুসলমান। আবার ‘হলোকাস্ট’, বীভ্ৎস নাৎসী বাহিনী কর্তৃক ষাট লক্ষ ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যা, তারাও কিন্তু মানুষ! চেঙ্গিস খান কর্তৃক ৪/৫ কোটি গনহত্যা, তারাও মানুষ।

হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করতে করতে যেখানে মানুষ আজ ক্লান্ত হওয়ার কথা, তা না হয়ে পুরো উদ্যমে, অস্ত্র খাতে বলীয়ান হচ্ছে মানুষ, শুধুই মানুষকে মারার জন্যে। ক্লান্তি ও অবসন্যতা মানুষকে বিন্দু মাত্রও ছুতে পারে নাই। অথচ আজ সামান্য একটি ভাইরাস, পারমাণবিক শক্তিধর পৃথিবীকে অনায়াসেই নাস্তানাবুদ করে ফেলছে। এতো শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা যদি একটি ক্ষুদ্র করোনাকেই মারতে না পারে তবে কাকে মারতে এইসব ভয়ংকর অস্ত্র? ট্রিলিয়ন কোটি ডলার, ইউরো ও অন্যান্য ব্যয় হচ্ছে কিসের জন্য, চিকিৎসা খাত এতো দুর্বল কেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষমতা সীমিত কেন?

আরেকবার ভেবে দেখুন, ট্রিলিয়ন কোটি ডলার, ইউরো, ইত্যাদি যদি অস্ত্র খাতে ব্যয় না করে চিকিৎসা, উন্নয়ন ও মহাকাশ খাতে ব্যয় করা হতো তবে কি হতো এই মাটিতে ও মহাকাশে! হ্যাঁ অনেক কিছু হতো। আমরা পৌছে যেতে পারতাম চতুর্থ ডাইমেনশনে(সময় যাত্রা) এবং দ্বিতীয় সিভিলাইজেশনে। এমনকি নিজস্ব নক্ষত্রের সমুদয় শক্তি মানুষ ব্যবহার করতে পারতো নির্দ্বিধায়। কোথায় থাকত তখন এই পাপী ভাইরাস! আমার কথা গুলি অপ্রিয় হতে পারে, তার পরেও বলি কারণ, আমিও মানুষ, আমাদেরও বাঁচার ইচ্ছা আছে।একটু চিন্তা করে দেখুন, পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কয়েক কোটি মানুষ অনাহারে বসবাস করে। অথচ বাহারি পোষাকে প্রতিদিন পৃথিবীতে কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে। লজ্জা ঢাকা জরুরি, তাই বলে নিজের সহজাতকে না খাইয়ে? বুঝলাম মানুষ সভ্যজাতি, পোষাক নিত্যসঙ্গী। তাই বলে কোটি মানুষকে আধা পেটে রেখে বাহারি পোষাকে চলাই কি মানব সভ্যতা? মানবিকতার কিয়দংশ ও যদি ক্ষুধার্তদের মাঝে দেয়া হতো তবে, পৃথিবীর কোন মানুষ কেন, কোন বোবা প্রাণীও ভূখা থাকতো না। তাদের পুষ্টি, ইমিউনিটি, শক্তি ও সাহস বাড়তো। ফলে,ভাইরাস মানুষের কাছে ঘেঁষারও সুযোগ পেত না। কিন্তু মানুষ অসহায়, সচেতনতা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া তাদের আর বাঁচার উপায় নাই।

পরিশেষে বলতে চাই, ভাইরাস কর্তৃক মানুষের মৃত্যুটা কিছুটা মানা গেলেও, মানুষ কর্তৃক মানুষের মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না, সভ্যতার আলোকে এটা অশোভনীয়। তারপরও শেষ কথাটি এই বলতে চাই, মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা একজন এবং মহাজ্ঞানী ঐ একজনই। তাই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর পৃথিবীতে জ্ঞানীর সংখ্যা অগনিত। তাই তো শ্রষ্টার সৃষ্টি করা এই পৃথিবী আজ ধ্বংশের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে। যুদ্ধ মানুষের উন্মাদনা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মানসিকতা যত দিন না বদলাবে এবং হিদায়েত না আসবে ততোদিন এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ, মানুষ কর্তৃক খুন হবে।

কিঞ্চিত ঠা