ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ আসে ভুলিয়ে দিতে, সকল বিবাদ দ্বন্দ্ব। ঈদ মানে ভুলে যাওয়া, যত দুঃখ ও ভয়। কিন্তু করোনার কারণে চলতি বছরের ঈদুল ফিতর অন্যান্য সময়ের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে নিতে প্রত্যেক বছর ১৫ রোজার পর থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে যায় সবাই। ২৭ রোজার পর লঞ্চঘাট, ট্রেন স্টেশন, বাস স্ট্রান্ডগুলো যুদ্ধে ক্ষেত্রে পরিণিত হত। বাড়তি ভাড়া দিয়েও গন্তব্যে যে সকাল গড়িয়ে বিকেল হতো। কিন্তু এ বার সেই যুদ্ধ নেই। আছে একটা থমথমে নীরবতা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চলছে সাধারণ ছুটি। বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজার। যার করাণে ঈদের মাত্র ২ দিন বাকি থাকলেও পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে পারে নি বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি প্রায় ২ মাস যাবত ট্রেডিং বন্ধ থাকায় অনেক সিকিউরিটিজ হাউজের মালিক পক্ষ ট্রেডারসহ হাউজে কর্মরতদের বেতন দেয় নাই।

তাই মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে হাতে টাকা নাই বিনিয়োগকারী ও ট্রেডারদের হাতে। এ পরিস্থিততে পুরো পরিবারের তিনবেলা খাবার জুটানো তাদের কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের। তাই এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মনে নেই কোনো আনন্দ।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর বন্ধ ঘোষণা করা হয় পুঁজিবাজার। এর মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই ট্রেক হোল্ডার ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর প্রস্তাব প্রদান করা হলেও কোরাম সংকটের কারণে তা হয় নি।

ফলশ্রুতিতে অধিকাংশই অর্থ সংকটে রয়েছেন। বাজার বন্ধ থাকায় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে উত্তোলনযোগ্য (ম্যাচুয়েড) টাকা থাকা সত্বেও তা উঠাতে পারেনি বিনিয়োগকারীরা। হাতে টাকা না থাকোয় এবারের ঈদে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের স্ত্রী, সন্তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না। এমন কি নিত্যদিনের প্রয়োজনী কাজেও অর্থ সংস্থান করতে পারছেন না।

লংকা বাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আনিসউজ্জামন বলেন, আমার সঞ্চিতির বড় অংশই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা। পুঁজিবাজার থেকে নিয়মিত ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলিত মুনাফায় সংসারের খরচ বহন করি। কিন্তু ২ মাসের মত পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে ভুগছি।

তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই হাতে থাকা বাড়তি অর্থ বিনিয়োগ করে থাকি। নতুবা নিজেদের বিও অ্যাকাউন্টে রাখি। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজারের লেনদেন বন্ধ রয়েছে। যার কারণে সিডিবিএলও বন্ধ। ফলে, টাকা তোলার বিকল্প কোন উৎস নাই।

স্টার লিংক সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারী জসিম উদ্দিন বলেন, টাকা থাকলেও অভাবে পড়তে হয় করোনা না আসলে বুঝতেই পারতাম না। আমার বিও অ্যাকাউন্টে যে পরিমান টাকা আছে তা আমার ও পরিবারের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু করোনার কারনে শেয়ার মার্কেট থেকে টাকাও তুলতে পারি না। এখন বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের সাথে যুক্ত থাকায় বন্ধুরাও মনে করে আমার কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে। কিন্তু কে বুঝাবে- টাকা তো আছে কিন্তু তা তোলার কোন উপায় নাই।

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজের ট্রেডার বলেন, মালিক পক্ষ বছরের পর বছর মুনাফা করলেও করোনা কালে হা হুতাশ করছে। অনেকেই বেতন দেয় নি। ঈদের বোনাসের তো প্রশ্নই আসে না।

তারা বলেন, সিকিউরিটিজ হাউজের মালিকদের আরো হৃদয়বান হওয়া উচিত। করোনা একটাদুযোর্গ। এদুযোর্গে হাউজের কর্মকর্তাদের পাশে দাাঁড়ানো উচিত।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী আছেন যাদের আয়ের পুরোটাই পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরশীল। তারা টাকা উঠাতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি করছি। আসন্ন বাজেটে মহামারি করোনা ভাইরাসজনিত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার নিমিত্তে ন্যূনতম আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিঃশর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য মার্জিন অ্যাকাউন্টের সুদ চলতি বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মওকুফের দাবি জানাচ্ছি।