নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক বানভাসী মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে চরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা। চারণভূমি তলিয়ে থাকায় তীব্র হয়ে উঠছে গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট।

এদিকে, গত ২০ জুন থেকে এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরেও উলিপুরে দুই শিশু ও চিলমারীতে এক গ্রাম পুলিশসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চল সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়া গ্রামের মোন্তাজুল ইসলামের শিশু পুত্র বায়েজিদ ইসলাম (৮) সবার অগোচরে বন্যার পানিতে পড়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন শিশুটিকে মূমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে, দুপুরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চিড়াখাওয়ার পাড় এলাকায় বাবু মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে এসে মুন্নি খাতুন নামের দেড় বছরের এক শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের চর গোড়াইপিয়ার গ্রামের বকুল মিয়ার কন্যা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে, চিলমারী উপজেলার থানার হাট ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ডুবে এক গ্রাম পুলিশের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই গ্রাম পুলিশের নাম সুরুজ মিয়া (৫৫)। তিনি চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ি কিসামত গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাড়ির সামনের বিলে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা পাটের জাগ খুঁজতে গিয়ে তিনি ডুবে মারা যান। মৃত সুরুজ মিয়া চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ২০ জুন থেকে এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জনই শিশু।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র হয়ে উঠছে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৭০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা এরইমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।