২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘নারীদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াব। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এই সংখ্যা ৩৩ শতাংশে নিয়ে যাব।’

তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। উপরন্তু ২০০৮ সালে দলের নিবন্ধন চালুর সময় রাজনৈতিক দলগুলো গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে ২০২০ সালের মধ্যে নারী সদস্যদের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নির্ধারিত সময় প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এলেও তার কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। যদিও দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাইকমান্ড নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একমাত্র নারী সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। এখন আমাদের দলে প্রায় ১৪ শতাংশ নারী রয়েছেন। সারা দেশের বিভিন্ন কমিটিতেও অনেক নারী সদস্য রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের নেতৃত্বে আনতে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেকে নারী নেতৃত্ব মানতে চান না। তাই একটু সময় লাগছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে নারী নেতৃত্ব পূরণে। এটি যেহেতু দ্রুত হচ্ছে না, তাই ধীরে ধীরে এটি পূরণের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোতে পাঁচ বছর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ০ বছরের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নারীসমাজের পক্ষ থেকে ১০ দফা প্রস্তাব আমরা তৈরি করেছি। তা নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্থায়ী কমিটি এবং নির্বাহী কমিটি মিলিয়ে মোট সদস্যসংখ্যা ৬৪০ জন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ৭১ জন। সে হিসাবে বিএনপিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছে ১১.০৯ শতাংশ। স্থায়ী কমিটির ১৯ জন সদস্যের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া একমাত্র নারী সদস্য সেলিমা রহমান। ৮২ জনের উপদেষ্টামণ্ডলীতে ছয়জন নারী সদস্য রয়েছেন। তাঁরা হলেন—সারোয়ারী রহমান, অধ্যাপিকা তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, রোজী কবির, তাহমিনা রুশদীর লুনা, আফরোজা খান রিতা। আর ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে একমাত্র নারী সদস্য রাবেয়া চৌধুরী।

সাংগঠনিক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলী, সহসম্পাদকমণ্ডলীর সংখ্যা ২০৯ জন। এই পদগুলোতে নারী রয়েছেন ২০ জন। তাঁরা হলেন—সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুর এ আরা সাফা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক ম্যামাচিং। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বেবী নাজনীন, সহশিক্ষা বিষয়ক পদে হেলেন জেরিন খান, সহপ্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক

সহসম্পাদক অর্পণা রায়, সহমহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, সহত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি, সহস্থানীয় বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার, সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু,  সহস্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি, সহতাঁতি বিষয়ক সম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, সহমানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, সহনার্সেস ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম।

নির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা ২৯৪ হলেও নারী রয়েছেন মাত্র ৪৩ জন। তাঁরা হলেন—রেজিনা ইসলাম, বিলকিস ইসলাম, সাঈদা রহমান জ্যোত্স্না, রওশন আরা ফরিদ, লাভলী রহমান, কাজী হেনা, খালেদা পান্না, শাহিদা আখতার রীতা, নূরজাহান ইয়াসমীন, লায়লা বেগম, রহিমা সিকদার, লিটা বশির, মেহেরুন্নেসা হক, রাজিয়া আলিম, শাহিনা খান, খালেদা ইয়াসমীন, ইয়াসমীন আরা হক, ফেরদৌস ওয়াহিদা, শাহানা আখতার সানু, সাইমুম বেগম, হাসিনা আহমেদ, খালেদা রাব্বানী, সাহানা রহমান রানী, নার্গিস আলী, জেবা খান, নাছিমা আক্তার কল্পনা, ফিরোজা বুলবুল কলি, রিনা পারভিন, আয়েশা সিদ্দিকী মনি, নূরজাহান মাহবুব, পেয়ারা মোস্তফা, ফরিদা ইয়াসমীন, সিমকী ইসলাম, আরিফা জেসমিন, অ্যাডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, রুখসানা খানম মিতু, সেলিমা রউফ চৌধুরী, এলিজা জামান, সাবেরা আলাউদ্দিন হেনা, রিজিয়া ইসলাম, নিপুন রায় চৌধুরী, রাবেয়া আলী ও তাহমিনা খান আওরঙ্গ।

নারী নেতৃত্ব কিভাবে ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এরই মধ্যে সব জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, কতজন নারী নেতৃত্ব রয়েছেন তা জানাতে। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে মহিলা দলের সারা দেশে কোন কোন কমিটিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছেন তা জানাতে বলা হয়েছে। একইভাবে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর ২০১৪ সাল থেকে যেসব নারী উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর নির্বাচন করেছেন তাঁদের তালিকাও করতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রায় ৫০টি জেলার আংশিক তথ্য কেন্দ্রে জমা হয়েছে। বাকিগুলোও চলতি বছরের মধ্যে জমা হবে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনীতির প্রতিহিংসার কারণে আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। করোনার আগে প্রায় ৫০টি জেলায় বিএনপির মহিলা আইনজীবী কতজন রয়েছেন তা আমরা খুঁজে বের করেছি।’

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী সব কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ তো দৃশ্যমান হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রক্রিয়াটি শেষ করব।