কোরবানিতে এবার বেড়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা। তবে করোনার কারণে এবার হাটের চেয়ে খামার থেকেই গরু কেনার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন খামারি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। তাঁরা বলছেন, গত বছর ঈদুল আজহার ২০ দিন আগে যে পরিমাণ বড় গরু বিক্রি হয়েছিল, এবার তা থেকে অনেক কম। এর বিপরীতে ছোট ও মাঝারি গরুর বিক্রি বেড়েছে। তবে চাহিদা বেশি থাকলেও ছোট ও মাঝারি গরুর দামে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন তাঁরা। কারণ প্রান্তিক চাষি কিংবা খামারি—সবারই এখন লক্ষ্য থাকবে কোরবানির জন্য রাখা সব গরু বিক্রি করে দেওয়া।
জানা যায়, খামারগুলোতে সারা বছর গরু, ছাগল ও মহিষ বিক্রি হলেও কোরবানির বিক্রি শুরু হয় রোজার ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন পর থেকেই। ঈদুল আজহার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পশু বিক্রি হয়ে যায়। বিশেষ করে গরু বিক্রি হয় বেশি। এসব গরু কেনেন ধনীরা, যাঁরা দুই বা ততোধিক পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। অবশ্য গরু কিনে লালনপালনের নির্দিষ্ট খরচ দিয়ে খামারেই রেখে দেন তাঁরা। ঈদের এক দিন বা দুই দিন আগে সেগুলো নিয়ে যান। খামারিরা বলছেন, প্রতিবছর কোরবানির এই সময়টায় যে পরিমাণ বিক্রি বা বুকিং হয়, এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।
তাঁরা বলছেন, সাধারণত আড়াই লাখ টাকার বেশি দামি গরুকে বড়, এর নিচে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মাঝারি আর এক লাখ টাকার নিচে হলে সেগুলো ছোট গরু হিসেবে চিহ্নিত করেন খামারিরা। বড় গরুগুলো বিক্রি হয় আগে। ছোট ও মাঝারিগুলো বিক্রি হয় সবার শেষে। কিন্তু এবার করোনার কারণে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বড়গুলো বিক্রি হলেও সংখ্যায় খুব কম।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন বলেন, গত বছরের এ সময় আমার এক হাজার ৪০০টি গরুর মধ্যে ৮০০টি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এর সব কটির দামই ছিল তিন লাখ টাকার ওপর। এবার দুই হাজার ৫০০টি গরু বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছি। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩১০টি। এর মধ্যে ২০০টি গরুই এক লাখ টাকার নিচে। আর ১০০টি গরু রয়েছে এক থেকে দুই লাখ টাকার। বাকি ১০টি বিক্রি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকার মধ্যে।
তিনি বলেন, এবার মানুষের আয়-রোজগার কম। তাই কোরবানির বাজেটও কম। তবে এবার দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক উদ্বৃত্ত গরু রয়েছে। তাই দাম কমিয়ে হলেও সবাই চাইবেন বিক্রি শেষ করতে।
হাটের ক্রেতা কমতে পারে বলে মনে করছেন আরেক খামারি নাবিল অ্যাগ্রোর মালিক মো. নাঈম ভুঁইয়া। অ্যাসোসিয়েশনের এই প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘এটা ঠিক যে এবার বিক্রি কম। কিন্তু মনে হচ্ছে এবার খামার পর্যায়ে বিক্রি বাড়বে আর হাটের ক্রেতা কমবে। কারণ আমার খামারে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্রেতা আসছে গত বছর এত ছিল না। তবে যাঁরা আসছেন তাঁরা ছোট আকারের গরু চাচ্ছেন। অনলাইনেও এ ধরনের গরুর বেশি চাহিদা দেখছি।’
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩। এ বছর তা এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০। তবে খামারিদের দাবি অনুসারে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে