ঝালকাঠিতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলা গবাদিপশুর খামারগুলোতে কয়েক হাজার গরু-ছাগল বিক্রির জন্য প্রস্তুর করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে পশুর বড় হাটগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় মানুষ দেশি গরু কিনতে খামারে ছুটছেন। কিছুটা কম দাম পেলেও মালিকরা খামার থেকে গরু ও ছাগল বিক্রি করে খুশি। তবে করোনায় আশুনুরূপ বিক্রি নিয়েও শঙ্কিত খামারিরা। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনেও পশু বিক্রি করার ব্যবস্থা রেখেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। 

জানা যায়, ঝালকাঠিতে কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। জেলায় ১৩০টি গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে। গ্রাম গ্রামে ঘুরে গরু ছাগলের বাচ্চা কিনে প্রায় ৯ মাস ধরে লালন-পালন করছেন খামারিরা। শুধুমাত্র খৈল, ভুষি, ভাত, ভাতের মাড়, খরকুটা ও কাঁচা ঘাসসহ দেশি খাবার দিয়ে তাদের মোটাতাজা করা হয়েছে। কোরবানিকে সামনে রেখে খামারের প্রায় সব গরুই বিক্রির উপযোগী। খামারিরা ব্যাংক ঋনের সাহায্যে অর্থের সংস্থান করে এসব খামার গড়ে তুলেছেন। সারা বছরের পরিশ্রমের ফল হিসেবে লাভের আশায় থাকলেও এবারের করোনা পরিস্থিতি তাদের সে আশা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে পাইকার কম থাকলেও স্থানীয়রা ক্রেতারা খামার থেকেই গরু কিনছেন বলেও জানিয়েছেন খামারিরা। করোনায় পশুর হাটে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মেডিসিনের মাধ্যমে মোটাতাজা করা গরু বেশি থাকায় স্থানীয় দেশি গরু কিনতে খামার থেকেই পশু কিনছেন ক্রেতারা। দামও সাধ্যের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

করোনাভাইরাসের কারণে কোরবানির ঈদে হয়তো আশানারূপ পশু বিক্রি নাও হতে পারে। তবে খামারিরা বিক্রি পশুগুলো কোরবানির পরেও বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। বিষমুক্ত কোরবানির পশু কিনতে দেশীয় পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা খামারে ক্রেতাদের আসার আহ্বান জানিয়েছেন খামার মালিকরা। এবছর অনলাইনেও খামার থেকে পশু কেনার ব্যবস্থা করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। 

রাজাপুরের পিংড়ি এলাকার সৈয়দ অ্যাগ্রোফার্মের তরুণ উদ্যোক্তা এনামুল হক বলেন, আমি এবছর ফার্মটি করেছি। বর্তমানে আমার খামারে ৬০টি গরু ও ৭০টি ছাগল রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে স্থানীয় খাবার দিয়ে খামারের গরু-ছাগল লালন পালন করা হয়। বিষমুক্ত পশু কেনার জন্য আমার খামারে আসছেন ক্রেতারা। দাম একটু কম পেলেও এ বছর ছেড়ে দেব। করোনা পরিস্থিতিতে পাইকাররা আসছেন না, তবে স্থানীয় ক্রেতারা এর মধ্যেই অর্ডার করেছেন। কোরবানির আগের দিন এখান থেকে নিয়ে যাবেন। 

নলছিটির শুকতাঁরা ফার্মের মালিক কবির হোসেন জোমাদ্দার বলেন, খামারে ৫০টি গরু রয়েছে। করোনার কারণে ক্রেতা কম। আগের চেয়ে এবছর কিছুটা কম বিক্রি হতে পারে। তবে আশাহারা হচ্ছি না, এখনো সময় আছে। আমাদের এখানকার ক্রেতারা ভাল পশু কেনার জন্য কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। 

ফার্মে পশু কিনতে আসা ঝালকাঠি শহরের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কোরবানির পশুর হাটে। তাই চিন্তা করলাম এবছর খামারে গিয়ে গরু কিনব। কারণ এতে আমাদের দুটি লাভ হচ্ছে, প্রথমত আমি গরু পাচ্ছি সম্পূর্ণ দেশি এবং বিষমুক্ত। দ্বিতীয়ত আমার স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম থাকছে। 

ঝালকাঠি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাহেব আলী বলেন, খামারিরা দুশ্চিন্তায় আছেন তাদের পশু নিয়ে। তবে বর্ডার এলাকার গরু না আসলে তাদের চিন্তা দূর হয়ে যাবে। মানুষ বিষমুক্ত পশু কিনতে চায়, তাই খামারের দিকেই তাদের চোখ রয়েছে। খামারিরা বিক্রি উপযুক্ত গরু এখন বেচতে না পারলেও কোরবানির পরেও পারবেন। আমরা এবছর মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে অনলাইনেও খামার থেকে গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি।