কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জেরে মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার প্রবাসী বাংলাদেশি রায়হান কবিরকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
আজ রবিবার (২৬ জুলাই) মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী আরফান আশিকের স্বাক্ষরে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি পাঠানোর তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন বিষয়ে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার প্রদান করায় বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরকে মালয়েশীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে মর্মে গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।’
বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় বাংলাদেশি তরুণ রায়হানের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে সমন জারি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় মালয়েশিয়া প্রশাসন। শুধুমাত্র সাক্ষাৎকার দেওয়ায় এভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খোঁজা, ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা ও পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে অভিবাসনবিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশ কিছু সংগঠন।
এদিকে, দেশে থাকা তার পরিবারও গভীর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। রায়হানের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অভিযোগ নেই বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘রায়হান কবিরের গ্রেপ্তারের বিষয়টি যাচাই করে তাঁকে আইনি সহায়তা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘১০১ ইস্ট’ অনুষ্ঠানে ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মহামারিতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের আচরণ নিয়ে কথা বলেন রায়হান কবির। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণ উঠে আসে।
সংবাদমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে এর সমালোচনা শুরু করে মালয়েশিয়া। দেশটির সরকার ওই প্রতিবেদনে তোলা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। প্রতিবেদনটি প্রচারের পর থেকে সাক্ষাৎকারদাতা বাংলাদেশি রায়হান কবিরের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তাঁর বিষয়ে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিও দেওয়া হয়। পরে রায়হানের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে মালয়েশীয় পুলিশ।
জানা গেছে, রায়হান এখন মালয়েশিয়ার পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ১৪ দিন পুলিশ তাঁকে তাদের হেফাজতে রাখতে পারবে। তবে রায়হানের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা জানা যাবে আগামীকাল সোমবার।
বাংলাদেশে রায়হানের পিতা শাহ আলম ও মা রাশিদা বেগম ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া রায়হান কবিরের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের ২১টি সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রামরু, ওয়ারবি, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), ওকাপ, বিএনএসকে, আইআইডি, আসক, বমসা, বাসুগ, ইনাফি, কর্মজীবী নারী, বিএনপিএস, ডেভকম, ইমা, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, রাইটস যশোর, বিলস, বাস্তব ও ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শাহী মসজিদ এলাকার শাহ আলমের একমাত্র ছেলে রায়হান কবির ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে তিনি বিএ পাস করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করেন। ২০১৩ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বন্দরের বিএম ইউনিয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন রায়হান। রায়হানের বাবা শাহ আলম ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।