চট্টগ্রাম ব্যুরো কামরুল হাসান

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা পাচার চক্রে জড়িত উখিয়ার এক ডজন প্রভাবশালিকে নজরদারির মধ্যে রাখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নজরদারির মধ্যে উখিয়ার একাধিক জনপ্রতিনিধি ছাড়াও সরকার দলীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন। ইতিমধ্যের নজরদারির পাশাপাশি তাদের সম্পদের তথ্যও সংগ্রহ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয় পাওয়া এই রোহিঙ্গারা। নিপিড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গাদের ইয়াবার ছোবলে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, উখিয়া বিভিন্ন ক্যাম্পে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। আর এইসব রোহিঙ্গাদের ইয়াবা ব্যবসায় অর্থায়ন করছে উখিয়ার একডজন প্রভাবশালী অসাধু রাজনীতিবিদ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের ইয়াবার অর্থের পুরোটাই দিচ্ছে উখিয়ার অসাধু কিছু প্রভাবশালী এবং জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি। তারা সবাই ঐ এলাকার সাবেক বিতর্কিত জনপ্রতিনিধির অনুসারী। সাম্প্রতিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত উখিয়ার কুতুপালং এর প্রভাবশালী ইউপি সদস্য বখতিয়ার বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে পুলিশের কাছে অনেক প্রভাবশালীর তথ্য দিয়ে গেছে। এছাড়া র‍্যাবও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবছার মেম্বারকে ইয়াবা সহ আটকের পরে একই তথ্য পেয়েছে। ইয়াব ব্যবসায় জড়িত ওই দুই জনপ্রতিনিধি সাবেক বিতর্কিত এক জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন ছিলেন।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসায় অর্থের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছিলো। সহযোগী আবু তাহের এর ইয়াবা ব্যাবসায় বখতিয়ার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলো। কুতুপালং কেন্দ্রিক রোহিঙ্গাদের সকল বড় বড় চালানের সাথে বখতিয়ার জড়িত ছিলো।আরেক ইউপি সদস্য আবছার উদ্দিন চৌধুরীও ইয়াবা ব্যাবসায় অর্থের যোগান দিতো বলে জানিয়েছে র‍্যাব। তিনি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করতো।এছাড়াও ইয়াবা ব্যাবসায় উখিয়ার দুই ইউপি সদস্য ইয়াবা ব্যবসায় অর্থায়নের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা দুজনইজন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক বিতর্কিত জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ট। একজন ওই জনপ্রতিনিধির নিকট আত্মীয় ও আরেকজন ব্যবসায়িক পার্টনার। হলদিয়াপালং এর মরিচ্যা এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান (বিতর্কিত জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ট হিসেবে প্রভাবশালি) গত দুই বছরে বিপুল অর্থ সম্পদ অর্জনের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।উখিয়ার রাজাপালং এর প্রভাবশালী নেতা ও ইউপি সদস্য কঠোর নজরদারিতে আছে। এছাড়াও রাজাপালং, পালংখালী ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে আরো অনেক ইউপি সদস্যকে নজরদারি করা হচ্ছে।কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, বখতিয়ার মেম্বারের কাছে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি অনেক নতুন নতুন ইয়াবার পৃষ্টপোষকের তথ্য দিয়েছে। তাদের সকলকে আমরা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।কক্সবাজার র‍্যাব ১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, উখিয়ার অনেক প্রভাবশালীকে নজরদারি করা হচ্ছে। তারা সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমান টাকার মালিক হয়েছেন। তারা মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবার মূল পৃষ্টপোষক। বাংলাদেশ থেকে ইয়াবাকে পুরোপুরি দমনে এসব প্রভাবশালির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।