গতরাতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবলের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ ৮-২ হারিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাকে। এই দশ গোলের ম্যাচটি রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ১০ গোলের ম্যাচটি পরিসংখ্যানের দিকে চোখ বুলালেই দেখা যাবে, রেকর্ড বইয়ে কি-কি হয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে নকআউট পর্বে এত বড় ব্যবধানে জয় পাওয়া প্রথম দল হিসেবে নাম লিখলো বায়ার্ন মিউনিখ। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় রিয়াল মাদ্রিদ ৯-১ গোলে হারিয়েছিলো এফসি ওয়াকার ইন্সব্রুককে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেকোন পর্বে বায়ার্ন মিউনিখের এটিই সবচেয়ে বড় জয়।
এ নিয়ে দ্বাদশবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠল বায়ার্ন মিউনিখ। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে উঠার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়স্থানে আছে তারা। সবচেয়ে বেশি ১৩ বার সেমিতে খেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বায়ার্ন ম্যাচে ৮ গোল করেছে। আর বার্সেলোনা করেছে ১ গোল। কিন্তু ম্যাচে বায়ার্নের জালে সাতবার গোলের জন্য শট নিয়েছিলো বার্সা। শটগুলো গোলে পরিণত হলে, হয়তো ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেত। এটিও নিয়েও রসিকতায় ব্যস্ত বার্সার প্রতিপক্ষ সমর্থকরা।
ফাবিও কাপেলো (১৯৯২-৯৩) এবং লুইস ফার্নান্দেসের (১৯৯৪-৯৫) পর তৃতীয় কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুর ছয় ম্যাচে জিতলেন বায়ার্নের কোচ হান্সি ফ্লিক। ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম কোন ম্যাচে এতে বেশি গোল হজম করলো বার্সেলোনা। গত ৭৪ বছরের ইতিহাসে এত বড় ব্যবধানে কখনও কোন ম্যাচ হারেনি বার্সেলোনা। ১৯৪৬ সালে কোপা দেল রে’র শেষ ষোলোয় সেভিয়ার কাছে তারা ৮-০ গোলে হেরেছিল।
এ নিয়ে গত পাঁচ মৌসুমে চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো বার্সেলোনাকে। এ নিয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা ৬ ম্যাচেই হারল। বায়ার্ন ছাড়া আর কারো কাছে বার্সা এত বেশি হারেনি। বায়ার্ন ছাড়া অন্য কোনো দলের কাছে বার্সেলোনার সর্বোচ্চ হার চার ম্যাচ। এন্ড্রি শেভেচেঙ্কোকে স্পর্শ করলেন থমাস মুলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে ৫টি গোল করেছেন মুলার। শেভেচেঙ্কোও বার্সার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ৫টি গোল করেছেন।
এই নিয়ে পাঁচবার প্রতিপক্ষকে আট গোল দিলো বায়ার্ন। এর আগে ২০১১ সালে জার্মান ক্লাব এফসি এসটি পৌলিকে একবার এবং ২০১৩-২০১৫-২০১৭ সালে তিনবার এসভি হার্মবুর্গের জালে আট গোল দিয়েছিলো বায়ার্ন। এটিই বার্সেলোনার সবচেয়ে লজ্জার হার নয়। এর আগে ১৯৩১ সালে অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের কাছে ১২-১ গোলে হেরেছিলো বার্সেলোনা। এরপর ১৯৪৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ১১-১ গোলে, ১৯৪০ সালে ১১-১ গোলে সেভিয়ার কাছে ও সর্বশেষ ১৯৪৬ সালে সেভিয়ার কাছে ৮-০ গোলে হার আছে বার্সেলোনার।
পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা আট ম্যাচে গোল করার কীর্তি গড়লেন বায়ার্নের রবার্ট লিওয়ানদোস্কি। এর আগে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ২বার (২০১৪ সালে টানা ৮টি ও ২০১৮ সালে টানা ১১টি গোল করেন), রুডি ভ্যান নিস্তেলরয় একবার (২০০৩ সালে টানা ৯ ম্যাচ) ও লুইস আরাগনস (১৯৭০ সালে টানা ৮ ম্যাচ)। বার্সেলোনার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা নয় ম্যাচ জয়ের নজির গড়লো বায়ার্ন। অবশ্য রেকর্র্ডটা বার্সার পক্ষে। ২০০৩-০৩ মৌসুমে টানা দশ ম্যাচ জিতেছিলো বার্সেলোনা।
এই মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার এটি নবম হার। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর এটি সর্বোচ্চ। ঐ মৌসুমে ১১ ম্যাচ হেরেছিলো বার্সা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে কখনো প্রথমার্ধে চার গোল হজম করেনি বার্সেলোনা। কিন্তু এবার বায়ার্নের কাছে প্রথমার্ধেই চার গোল হজম করে লজ্জার রেকর্ড গড়ে বার্সা।