ইউলিয়ান নাগলসমানের ফুটবলদর্শনে ভর করে শুরু থেকেই উড়তে চেয়েছে আরবি লাইপজিগ। ‘যান্ত্রিক’ জার্মান ফুটবল ছেড়ে ছড়াতে চেয়েছে ভয়ডরহীন ফুটবলের সুবাস। যে ফুটবল জার্মানির ক্লাবটিকে তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এনেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে; কিন্তু আজ পিএসজির বিপক্ষে আর পারল কই! আর্জেন্টাইন-ব্রাজিলিয়ান রথে চড়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে পিএসজি। পর্তুগালের লিসবনে লাইপজিগকে হারিয়েছে তারা ৩-০ গোলে।
ভয়ডরহীন ফুটবলের সুবাস মিনিট পাঁচেক ছড়াতে পেরেছে লাইপজিগ। ম্যাচের তিন মিনিটে প্রথম আক্রমণটাও করেছে তারা। বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া এনকুনকুর শট তাঁরই এক সতীর্থের পায়ে লেগে ফিরে আসে। তখন পর্যন্ত বলে স্পর্শ পাননি পিএসজির সবচেয়ে দামি দুই খেলোয়াড় নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে।
শুরুতে একটু যেন বেশিই সতর্কও ছিল পিএসজি। আগের দুই রাউন্ডে টটেনহাম ও অ্যাটলেটিকোর মতো দলকে বিদায় করে সেমিফাইনালে ওঠা লাইপজিগকে একটু বুঝেপড়ে নিতে হবে না! সেই বোঝাশোনার কাজটা শেষ করে ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমণে যায় পিএসজি। বলে প্রথম স্পর্শেই গোল পেতে পারতেন নেইমার। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ডান পায়ে স্পর্শে জালে পাঠাতে চেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। কিন্তু ডান পোস্টে লেগে বল চলে যায় বাইরে। পরের মিনিটে নেইমারের পাসে এমবাপ্পে বল জালে পাঠালেও গোল দেননি রেফারি। আগেই যে বল হাতে লেগেছিল নেইমারের! ১০ মিনিটের মধ্যেই সুযোগ পেয়েছিলেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াও। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য পিএসজি এগিয়ে যাওয়া গোলটি পেয়েছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমন্বয়েই। বক্সের বাইরে দলকে ফ্রি-কিক এনে দেন নেইমার। ১৩ মিনিটে ডি মারিয়ার নেওয়া ফ্রি-কিকে দুর্দান্ত এক হেডে ১-০ করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োস। নেইমারের পাস থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে আতালান্তার বিপক্ষে পিএসজিকে সমতাসূচক গোলটি এনে দিয়েছিলেন তিনিই।
![মার্কিনিয়োসের সঙ্গে পিএসজির গোল উদযাপন নেইমারের। ছবি: রয়টার্স](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/400x257x1/uploads/media/2020/08/19/db6cc68dd3282be9da57520a773780f6-5f3c4536b772e.jpg)
১৩ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করে পিএসজি। এবারের গোলটিও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমন্বয়ে। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ডি মারিয়ার উদ্দেশে দুর্দান্ত এক ব্যাক-হিল ফ্লিক করেন নেইমার। ডি মারিয়াও ঠান্ডা মাথার নিখুঁত ফিনিশিংয়ে বল পাঠান জালে। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পিএসজি।
দুই গোলে পিছিয়ে থাকলেও বিরতি থেকে লাইপজিগ ফেরে সেই ভয়ডরহীন ফুটবলের মন্ত্র নিয়েই। এবার আরও বেশি সুবাস ছড়ায় নাগলসমানের দল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেশ কয়েকবারই তারা ভীতি ছড়াতে পেরেছে পিএসজির রক্ষণে। তবে ৫৫ মিনিটে গোল খেয়ে যায় লাইপজিগই। এবার গোলটির সঙ্গে আর্জেন্টাইন ডি মারিয়া থাকলেও ছিলেন না কোনো ব্রাজিলিয়ান। ডি মারিয়ার ক্রসে হেড থেকে গোলটি করেছেন হুয়ান বেরনাত। নেইমার অবশ্য শেষে গিয়ে পায়ের টোকা দিয়েছিলেন বলে। কিন্তু লাইপজিগের খেলোয়াড়দের অফসাইডের দাবির মুখে গোল হয়েছে কি না, রেফারি তা পরীক্ষা করতে যাওয়ায় এটাও পরিষ্কার হয়েছে যে গোলটি স্প্যানিশ উইঙ্গার বেরনাতেরই।
৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও থমকে যায়নি লাইপজিগ। থেকে থেকে তারা ভীতি ছড়িয়েছে পিএসজির রক্ষণে। কখনো চোটে থাকা কেইলর নাভাসের বদলি হিসেবে নামা গোলকিপার রিকোর দৃঢ়তা,কখনো আবার লাইপজিগের ফরোয়ার্ডদের ভুল বাঁচিয়েছে পিএসজিকে। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল পিএসজিও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেইমার-এমবাপ্পেরা তা করতে পারেননি।
নেইমার অবশ্য দুর্ভাগাই ছিলেন। প্রথমার্ধে গোলবঞ্চিত হয়েছেন পোস্টে লাগায়। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত যে ফ্রি-কিক নিয়েছেন সেটিও লেগেছে পোস্টে। সেদিক থেকে এমবাপ্পে এই ম্যাচে অনেকটাই ছিলেন নিষ্প্রভ হয়ে।