পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়ায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ইসাহক আলী মালিথার সমর্থকরা। সভা শুরুর আগে প্রধান অতিথিকে বরণ করা নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত।
উপস্থিত নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনসহ অন্য অতিথিদের বরণ করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটনকে সঙ্গে নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহক আলী মালিথা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফের জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু তাঁর সমর্থিত ২০-২৫ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া ধাক্কাধাক্কি সংঘর্ষে গড়ায়।
আহতদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে ইসাহক মালিথা, আবু বক্কার মালিথা, লাবু ও রনিসহ অন্তত ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে লাবু ও রনিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবিরের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে অতিথিরা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও ইসাহক মালিথার মধ্যে মিলমিশ করে দেন। এরপর উভয় নেতা তাঁদের কর্মীদের শান্ত হওয়ার কথা বলেন। এ পর্যায়ে আরেক দফা সংঘর্ষ বাধে।
এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক অভিহিত করে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো সন্ত্রাসী ও অপরাধী আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নৌকার প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার জনজোয়ার যদি পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতার (আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও ইসাহক মালিথা) কারণে নষ্ট হয়, তাহলে তাঁরা দায়ী থাকবেন। আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও ইসাহক মালিথাকে পৌরসভার বাইরে নির্বাচনের মাঠে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তিনি।
আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও ইসাহক আলী মালিথা একে অপরকে দোষারোপ করেন।
ঈশ্বরদী থানা সূত্রমতে, বেশ কয়েক দিন আগে মিন্টু ও মালিথা গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। উপনির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ মিন্টু মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে উপনির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই তিনি নানাভাবে শক্তি প্রদর্শন করছেন। অন্যদিকে ইসাহক আলী মালিথার নেতৃত্বে অপর একটি পক্ষ নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। শহরের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তার পরও শহরে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।