লকডাউনের সময় ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে অনেকেরই মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। এঁদের মধ্যে ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলেকে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘আমি বোকার মতো ভুল করেছি।’
সেই ভুল এই অলরাউন্ডারের ক্রিকেট-জীবন থেকে এরই মধ্যে কেড়ে নিয়েছে একটি বছর। তাও আবার কোন সময়ে? যখন ২০১৯-এর বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি নিজেকে তুলে নিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। আট ম্যাচে ৬০৬ রান করার পাশাপাশি ১১ উইকেট নেওয়ার মতো অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে এমনকি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়ার দৌড়েও ছিলেন সামনের সারিতেই।
কিন্তু জুলাইয়ে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার প্রায় চার মাস পর অক্টোবরের শেষে গিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে একাধিকবার জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগের খবর চেপে যাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। চালাচ্ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট (আকসু)। তদন্তে নিজের দোষ স্বীকার করে শাস্তিও মাথা পেতে নেওয়ায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর তাঁকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় আইসিসি। এর মধ্যে পরের এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা।
অর্থাৎ নতুন করে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ালে নিষেধাজ্ঞা এক বছরেরই। সেই নিষেধাজ্ঞাই এত দিন ধরে ভোগ করে আসছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয়, যা তাঁর ভাষায় ‘বোকার মতো ভুলের’ প্রায়শ্চিত্তই। যা এরই মধ্যে করেও ফেলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক। আজই তাঁর নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। আগামীকাল থেকে সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে ফিরতেও আর কোনো বাধা নেই।
কোয়ারেন্টিন জটিলতায় অক্টোবর-নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের তিন টেস্টের সফর স্থগিত না হয়ে গেলে অবশ্য আর দুই-চার দিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতেন সাকিব। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) সেরকম প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছিল। সফরের সূচি অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর থেকে সিরিজের প্রথম টেস্টেই ফেরার সুযোগ ছিল না। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই তাঁকে খেলানোর কথা বলেছিলেন খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সে জন্য নিষেধাজ্ঞা ওঠার আগেই বিশেষ ব্যবস্থায় আলাদাভাবে তাঁকে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে প্রস্তুতির সুযোগ করে দেওয়ার চিন্তাও ছিল দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনের।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অধীনে নিবিড় অনুশীলনে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইও শুরু করেছিলেন। তবে শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেই পর্ব স্থগিত করে সাকিবও ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রী-সন্তানের কাছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হতে যাওয়া ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি দিয়েই ফিরবেন ক্রিকেটে। দেশেও ফিরবেন এর ঠিক আগেই।
নিষিদ্ধ থাকলেও নিষেধাজ্ঞার সময়ে খুব বেশি ক্রিকেট অবশ্য মিস করতে হয়নি তাঁকে। কারণ করোনাভাইরাসের থাবায় এমনিতেও বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারকে সাত মাস বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছে। তবু তাঁরা অবশেষে ক্রিকেট খেলতে পারছেন। পারছিলেন না সাকিবই। যদিও এর মধ্যেও তাঁর জীবন থেমে থাকেনি। এই সময় দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছেন। নিজের নামে ফাউন্ডেশন খুলে করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। ফেরার প্রস্তুতি নিতে দেশে এসে করে গেছেন বিজ্ঞাপনের শুটিংও।
ক্রিকেটটাই শুধু খেলতে পারছিলেন না। নিষিদ্ধ ছিলেন যে! ভুলের প্রায়শ্চিত্ত শেষে মুক্ত হতে আজকের দিনটিই শুধু বাকি।