এক বছরের শাস্তি ভোগ করে অবশেষে সবধরনের ক্রিকেট খেলার জন্য মুক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আজ থেকে আবারো তিনি আগের মতো করেই মিশতে পারেন সবার সঙ্গে, খেলতে পারবেন যেকোনো ধরনের ক্রিকেট।
ঠিক ১ বছর আগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যেন পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। সদ্য ক্রিকেটারদের ধর্মঘট থেকে মুক্ত হওয়া ক্রিকেটাঙ্গন জানতে পারল, জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার অপরাধে নিষিদ্ধ হয়েছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান! যে সাকিব আল হাসান ‘বাংলাদেশের জান’ হিসেবে ভক্তদের কাছে পরিচিত। যে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’; সেই সাকিবকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে! মানতেই পারছিলেন না কেউ। এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভও হয়েছিল সে সময়ে।
২৮ অক্টোবর পেরিয়ে, ২৯ অক্টোবরের প্রথম প্রহর; তখন হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ, বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঘুমিয়ে যাওয়ার। তখনই জেগে থাকা মানুষদের হতবাক করে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো একটি খবর, যার সারমর্ম ছিল, ফিক্সিং ইস্যুতে নিষিদ্ধ হতে চলেছেন সাকিব আল হাসান। সারারাত, পরদিন সকাল পেরিয়ে দুপুর পর্যন্ত চলল এই খবর নিয়ে নানান কানাঘুষা। বিকেল হতেই মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হাজির সাকিব, সঙ্গে ছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনও। তবে এর আগেই আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি।
তবে আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে তাদের তদন্ত কাজে যথাযথ সহযোগিতা করায় এক বছর স্থগিত করা হয় সাকিবের শাস্তি, ফলে বাকি এক বছর মাঠের বাইরে কাটাতে হয় তাকে। যা শেষ হলো ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর পেরিয়ে ২৯ অক্টোবর আসতেই। আজ থেকে সেই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হলেন সাকিব।
নিষেধাজ্ঞার এ সময়টাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবমিলিয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলতে পারেননি সাকিব। যেখানে ছিল ৪ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এই মিস করা ম্যাচের সংখ্যা হতো অন্তত ত্রিশ। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল ও স্থগিত হয়েছে অনেক সিরিজ। ফলে ১৪টির বেশি ম্যাচ মিস করতে হয়নি তাকে।
আর এখন থেকে বাংলাদেশ দল যত ম্যাচ খেলবে, সবগুলোতেই থাকতে পারবেন সাকিব। শুধু আন্তর্জাতিক নয়, যেকোনো ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলতে পারবেন তিনি। যার শুরুটা হয়তো হতে পারে, আগামী মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া বিসিবি পরিকল্পিত পাঁচ দলের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে।
বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, এই টুর্নামেন্টে খেলবেন সাকিব। তবে এখনো আসেনি স্কোয়াড বা প্লেয়ার্স ড্রাফটের তালিকা। এখনো পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছেন সাকিব। কবে দেশে ফিরবেন, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি।
তবে তিনি যদি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের কথা মাথায় রেখে হয়তো নভেম্বরের ১ তারিখের মধ্যেই দেশে ফিরে আসতে হবে। কেননা এর বেশি দেরি হলে কোয়ারেন্টিন কাটিয়ে মাঠে ফিরতে আরো সময় লেগে যাবে তার।