লাল দুর্গ বা রিপাবলিকানদের ঘাঁটি বলে পরিচিত টেক্সাসে এবার রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। ১৯৭৬ সালে জিমি কার্টারের পর আর কোনো ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জয় পাননি ওই স্টেটে। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে অল্প ব্যবধানে হেরে গেছেন বাইডেন। সেই লড়াইয়ে বাইডেনের সঙ্গী হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডোনা ইমাম। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কংগ্রেসে টেক্সাসের আসন ৩১ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে অংশ নিয়ে লড়াই করেই হেরেছেন ডোনা।
ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ওই আসনে ডোনা ইমাম ৪৪.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিপাবলিকান পার্টির জন কার্টার ৫৩.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আগে অনেক বড় ব্যবধানে তিনি জিতলেও এবার ব্যবধান অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছেন ডোনা। ডোনা পেয়েছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ৩৯৪ ভোট।
এই বিষয়টিকেই বেশ গৌরবের বলে মনে করছেন টেক্সাসের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক ইলেকটর ও ডোনা ইমামের উপদেষ্টা নিশান খান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডোনা হতে যাচ্ছেন ভবিষ্যৎ তারকা। বাংলাদেশি হিসেবেও বিষয়টি গৌরবের।
ডোনা জয়ী হতে না পারলেও জর্জিয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জয় পেয়েছে দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান শেখ রহমান ও আবুল খান। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ রহমান চন্দন। এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে তিনি এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। গত ৯ জুন হওয়া দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অংশ নেয়নি। একই সঙ্গে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট আসন ৫-এ কোনো প্রার্থী দেয়নি রিপাবলিকানও। ফলে শেখ রহমান নিশ্চিতভাবেই বিজয়ী হন।
জর্জিয়া এমনিতেই এখন রেড স্টেট হিসেবে পরিচিত। তবে এবার এই স্টেটকে সুইং বলা হচ্ছে। রিপাবলিকান এই স্টেটে অনেকটাই ভালো করছেন ডেমোক্র্যাটরা। ফলে প্রথম মেয়াদে ডেমোক্রেটিক দল থেকে ওই স্টেটে প্রথম কোনো বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে শেখ রহমানের সিনেটর হওয়াটা খবরের জন্ম দিয়েছিল। সেই সঙ্গে তিনিই ছিলেন স্টেটটির প্রথম কোনো মুসলিম আইন প্রণেতা।
নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ রহমান সব প্রবাসীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা এবং মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সবার আশীর্বাদে বহুজাতিক একটি সমাজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার মধ্যে অন্য রকমের একটি আনন্দ রয়েছে, যা আমাকে আরো সামনে এগোতে সহায়তা করবে।’
অন্যদিকে নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেটের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস পদে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে চূড়ান্ত বিজয় পেয়েছেন আবুল বি খান। ডিস্ট্রিক্ট রকিংহাম ডিস্ট্রিক্ট-২০ অনেক দিন ধরে রিপাবলিকানদের দখলে। এর আগে পর পর তিনবার তিনি ওই আসন থেকে বিজয়ীও হয়েছিলেন। এবারও ফল ধরে রাখলেন তিনি। এর আগে আবুল খান স্টেটে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ছিলেন। আবুল বি খানের জন্ম বাংলাদেশের পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায়। ১৯৮১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন।
এদিকে আশা জাগিয়েও পেনসিলভানিয়ার অডিটর জেনারেল পদে ড. নীনা আহমেদ পরাজিত হয়েছেন। এর আগে ওই স্টেটের রাজধানী ফিলাডেলফিয়ার ডেপুটি মেয়র এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন ড. নীনা।
নীনা আহমেদ ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে সেখানে লড়েছেন। গত ২ জুনে হওয়া প্রাইমারিতে এবার তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে ৮০ হাজার ১৩৭ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন চার লাখ ৭৭ হাজার ৫২৬ ভোট। সেই অর্থে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা সেখানে অত নয়, ফলে তিনি সব দেশের মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাতে পেরেছিলেন বলে মনে করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডা. ইবরুল চৌধুরী।
ড. নীনা আহমেদের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত মোট ভোট পাঁচ লাখ ৭০ হাজার। নীনা আহমেদ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান টি ডিফুর থেকে প্রায় এক লাখ ৯৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে আছেন; তাঁর প্রাপ্ত ভোট সাত লাখ ৬৪ হাজার। ফিলাডেলফিয়ার মেইল ইন ভোট এখনো যোগ হয়নি।