অতীতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নেতা যতই জনপ্রিয় হোন না কেন, পরবর্তী সময়ে তিনি আর নৌকা প্রতীক পাবেন না। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র উচ্চকণ্ঠকে এমনটি জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, মুহাম্মদ ফারুক খান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

সূত্র জানায়, মূলত আসন্ন ২৫ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ১০৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এঁদের মধ্যে দু-তিনটিতে বিগত নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পাওয়া বিদ্রোহী নেতারাও ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা তোলেন একজন নেতা। পরে জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল সংগঠনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে একাধিক নেতা কেন্দ্রের কঠোর অবস্থান গ্রহণে গুরুত্ব দেন। নেতাদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের আলোকেই ২৫ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা উচ্চকণ্ঠকে বলেন, সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে একটি পৌরসভার মেয়র বেশ জনপ্রিয় বলে আলোচনা ওঠে। তিনি গতবার নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য বলেন, বিদ্রোহীদের ছাড় দিলে দলে শৃঙ্খলা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে। নৌকার বিরোধিতাকারী যতই জনপ্রিয় হোন না কেন, তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সম্প্রতি দুটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, ভবিষ্যতেও এমন কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। যেসব জেলা ও মহানগরের নেতারা গ্রুপিংয়ের কারণে সংগঠনের কাজকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হবে।

মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান উচ্চকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এখন দলীয় শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সে কারণেই বিদ্রোহীদের পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

২৫ পৌরসভায় মনোনয়ন পেলেন যাঁরা : গতকালের বৈঠকে আসন্ন ২৫ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পঞ্চগড় সদরে জাকিয়া খাতুন, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে কশিরুল আলম, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে খাজা মইন উদ্দীন, রংপুরের বদরগঞ্জে আহাসানুল হক চৌধুরী ও কুড়িগ্রাম সদরে কাজিউল ইসলাম; রাজশাহী জেলার পুঠিয়ায় রবিউল ইসলাম, কাটাখালীতে আব্বাস আলী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মনির আক্তার খান তরু লোদী ও পাবনার চাটমোহরে সাখাওয়াত হোসেন সাখো; কুষ্টিয়ার খোকসায় আল মাছুম মুর্শেদ, খুলনার দাকোপ চালনায় সনত কুমার বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সদরে রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার; বরগুনার বেতাগীতে এ বি এম গোলাম কবির, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আবদুল বারেক মোল্লা, বরিশালের উজিরপুরে গিয়াস উদ্দিন বেপারী ও বাকেরগঞ্জে লোকমান হোসেন ডাকুয়া; মানিকগঞ্জ সদরে রমজান আলী, ঢাকার ধামরাইয়ে গোলাম কবির ও গাজীপুরের শ্রীপুরে আনিছুর রহমান; ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এস এম ইকবাল হোসেন (সুমন) ও নেত্রকোনার মদনে আব্দুল হান্নান তালুকদার; সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বিশ্বজিৎ রায়, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে মাসুদ উজ্জামান মাসুক এবং চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে বদিউল আলমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।