দুই হার, এক ড্র-তিন ম্যাচের জয়শূন্যতায় আত্মবিশ্বাস তলানীতে। লুকা মদ্রিচ-টনি ক্রুস-করিম বেনজেমাদের চোখে-মুখে ছন্দে ফেরার মরিয়া ভাব থাকলেও পারফরম্যান্সে পড়ল না এর ছাপ। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের একটি ভুল আশীবার্দ হয়ে এলো। সেভিয়ার মাঠ থেকে জয়ের হাসি নিয়ে ফিরল রিয়াল মাদ্রিদ।

লা লিগায় রামোন সানচেস স্টেডিয়ামে শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে হওয়া ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে আত্মঘাতী গোলটি করেন সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।

একের পর এক হোঁচটে কোণঠাসা রিয়াল খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে উঠবে, খেলবে ‘অল-আউট’ ফুটবল-এমন ভাবনা থেকেই কি না শুরু থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে সেভিয়া। ঘরের মাঠে লিগে আগের পাঁচবারের দেখায় চারবারই জেতা সেভিয়ার এমন মনোভাব ছিল কিছুটা বিস্ময়কর।

বিপরীতে, নিজেদের খুঁজে ফেরা রিয়ালকে দেখা যায়নি স্বরূপে। বরং যেভাবে তারা শুরু করেছিল, দ্বিতীয়ার্ধে তা ধরে রাখতে পারেনি। তাই কষ্টের জয়ে মূলবান তিন পয়েন্ট মিললেও তাদের দুর্ভাবনার অবসান হওয়ার আভাস খুব একটা মেলেনি।

ম্যাচের ৫৫ সেকেন্ডের মাথায় প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। তবে ডান দিক থেকে রদ্রিগোর পাস ডি-বক্সে পেয়ে ভিনিসিউস জুনিয়রের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

পঞ্চম মিনিটে গোলরক্ষকের ভুলে বিপদে পড়তে পারতো সেভিয়া। বল ক্লিয়ার করতে গোলরক্ষক বোনোর শট পা বাড়িয়ে রুখে দেন ভিনিসিউস, বল চলে যায় গোলমুখে। ওখানে হেড করতে লাফিয়েছিলেন বেনজেমা, কোনোমতে দলকে বাঁচান ডিফেন্ডার কার্লোস। এরপরও সুযোগ ছিল; কিন্তু গোলমুখে বলে পা লাগাতেই পারেননি ভিনিসিউস, এক ড্রপের পর বল নিয়ন্ত্রণে নেন গোলরক্ষক।

শুরু থেকে অধিকাংশ সময় সেভিয়া বল দখলে রাখলেও তার প্রায় সবটুকুই ছিল রক্ষণ সামলানোয়। আক্রমণে আধিপত্য ছিল রিয়ালের; কিন্তু প্রতিবার সেই ফিনিশিংয়ের সমস্যাই কাল হচ্ছিল। ২১তম মিনিটে টনি ক্রুসের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরালো শট দূরের পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়।

প্রথম আধ ঘণ্টা পর রিয়ালের মরিয়া ভাব কিছুটা কমে আসে। সেই সুযোগে পাল্টা আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে সেভিয়া। তবে বিরতির আগে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তারা। এর মাঝে ৩৮তম মিনিটে বেনজেমার শট ঝাঁপিয়ে কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান বোনো।

দ্বিতীয়ার্ধে শুরুটা বেশ ভালো করে সেভিয়া। প্রথম ছয় মিনিটে তিনবার রিয়ালের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় তারা। ৫১তম মিনিটে লুক ডি ইয়ংয়ের দারুণ ওভারহেড কিক যায় কোর্তোয়া বরাবর। এর খানিক পরেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় রিয়াল।

প্রথম মিনিটের সেই প্রচেষ্টার পর ভিনিসিউসের পারফরম্যান্স ছিল না সন্তোষজনক। ৫৫তম মিনিটে তার ছোঁয়া আর গোলরক্ষকের ভুলে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। বেনজেমার পাস ধরে বাঁ দিক থেকে ডি-বক্সে বল বাড়ান ফেরলঁদ মঁদি। ছুটে গিয়ে স্লাইডে কোনোমতে হালকা একটা টোকা দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তারপরও গোলের লাইনেই ছিলেন বোনো, কিন্তু বল হাতে জমাতে পারলেন না তিনি। তার পায়ে লেগে বল চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে।

পিছিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে বেশ খানিকটা সময় চাপ ধরে রাখে সেভিয়া। চার মিনিটের ব্যবধানে দুটি ‘হাফ-চান্স’ পায়ও তারা; কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি গুদেলি ও সুসো। ৮৬তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় স্বাগতিকদের। ওকাম্পোসের বাইসাইকেল কিক ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রেখে মাঠ ছাড়েন কোর্তোয়া।

১১ ম্যাচে ষষ্ঠ জয়ের দেখা পাওয়া রিয়াল ২০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠেছে। এক ম্যাচ কম খেলা সেভিয়া ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে পাঁচ নম্বরে।

অবশেষে জয় মিললেও তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা রিয়ালের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ অবশ্য নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা নিয়ে আগামী বুধবার ঘরের মাঠে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের মুখোমুখি হবে জিদানের দল।