প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবেন বলে ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দিয়েছেন আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তিনি আগামী রবিবার মামলা করবেন বলে জানান।

ব্যারিস্টার সুমন তার বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে শুক্রবার ৫৪ মিনিট আগে ফেসবুক লাইভে আসেন এবং ঘোষণা দেন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবেন। তিনি বলেন, পিয়া সাহা সরকারি কর্মকর্তার বউ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর নিকট মিথ্যা তথ্য দেন। যা বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের সামিল বলে মনে করেন ব্যারিস্ট্রার সুমন।

ব্যারিস্টার সুমন লাইভে পিয়াসাহাকে দেশে এনে যেনো তার বিচার দাবি করে বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটা ধর্মী সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু. মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নাই। অথচ পিয়াসাহা বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এটাকে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ৭১ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত যারা বাংলাদেশ কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। আর এখন পিয়াসাহা যে যড়যন্ত্র করছেন এ জন্য তার বিচার করা ফরজ হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, ধর্মীয়ভাবে নিপীড়িত বিশ্বের ১৭টি দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৭ জুলাই বুধবার ট্রাম্প তার ওভালের কার্যালয়ে এই প্রতিনিধিদের সাথে আলাপকালে বিশ্বজুড়ে নানা দেশে তাদের উপর চলা নিপীড়নের কথা শুনেছেন। ওই আলোচনার ভিডিও ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। তবে বাংলাদেশে এই ভিডিও আলোচনায় এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে।

বৃত্তাকার চিহ্নের মধ্যে পিয়াসাহা

ওই ভিডিওতে দেখা যায় বাংলাদেশি একজন নারীকেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কথা বলছেন। ওই নারী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিযোগ করে বলেন, তিনি একজন বাংলাদেশি, এ দেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি তাদের এই অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে তাদের জন্য সহায়তা চান। এ সময় ওই নারী আরও বলেন, সংখ্যালঘুরা নিজেদের দেশ ছাড়তে চান না। তিনি আরও জানান, তার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে কিন্তু এ ঘটনায় তিনি কোনো বিচার পাননি।

এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে জিজ্ঞেস করেন, কারা তার বাড়ি পুড়িয়েছে, জমি দখল করেছে? তখন ওই নারী উত্তর দেন, মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন তার জমিজমা দখল করে রেখেছে এবং তারা এ সকল কাজে রাজনৈতিক আশ্রয়ও পাচ্ছে।

এ দিকে এ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক বাংলাদেশিই ওই নারীর এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ করেছেন কড়া মন্তব্য। খান আমির নামের একজন বাংলাদেশি ওই ভিডিওর নিচে মন্তব্য করেছেন, ‘এই মহিলা একজন মিথ্যাবাদী। তিনি একজন আদর্শ বাঙালি নন। যদি তিনি তা হতেন, তবে নিজের দেশের নামে এমন মিথ্যা তথ্য দিতেন না। আমরা বাঙালিরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছি।’

যুবায়ের আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু মানুষ খুব নিরাপদ এবং আরামদায়ক জীবনযাপন করছে।
বাংলাদেশে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কোনো ধর্মীয় অস্থিরতা নেই- যেমনটা এই নারী উল্লেখ করেছেন। আমি মনে করি তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ বা তার নিশ্চয় একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।’ হৃদয় সাহা নামের আরেকজন সনাতন ধর্মালম্বী লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশি এবং আমার ধর্ম হিন্দু। আমি এখানে শান্তিতে বাস করছি। এই নারী একেবারেই ভুল তথ্য দিচ্ছেন।’

ভিডিওটি নিয়ে ইতোমধ্যেই ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়ায়, কেউ কেউ এই ভিডিওর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারাই জানা গেছে ওই নারীর পরিচয় এবং ফেসবুক আইডি। তিনি প্রিয়া সাহা, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ- খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাড়ি পিরোজপুরের চরবানিরীর মাটিভাঙ্গার নাজিরপুরে।