বৃদ্ধ ছাবের আলী। নিজের বয়স ঠিকমত বলতে পারেন না। এক ছেলে ও চার মেয়ে। অনেক কষ্টে ছেলে মেয়েদের বড় করে বিয়ে দিয়েছে। ছেলেকে আলাদা করে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি থাকেন সরকারি জমিতে তোলা খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘেরা কুড়ে ঘরে। ঝড় বৃষ্টি এবং কনকনে শীতও স্বামী-স্ত্রীকে রাত্রীযাপন করতে হয় এই কুড়ে ঘরে।
অনেক সময় প্রবল ঝড়-বাতাসে তাদের ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়ে চলে গেছে। ঘরে ভিতরে থাকা বুড়ো-বুড়ির বৃষ্টিতে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে। তাদের করার কিছুই ছিলো না। যাবার মত কোন স্থান ছিলো না। তাদের কুড়ে ঘর কখনো বিদ্যুৎতের আলোর মুখ দেখেনি। প্রকৃতির কাজ সারতে যেতে হয় খোলা আকাশের নিচে। অনেক কষ্টে তাদেরকে জীবন যাপন করতে হয়।
বলছিলাম দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৬ নম্বর রনগাঁও ইউনিয়নের কনুয়া গ্রামের আললদিয়া পুকুরপাড়ে সরকারি জমিতে কুড়ে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকা বৃদ্ধ ছাবের আলীর কথা।
বৃদ্ধ ছাবের আলী বলেন, ‘একদিন সকালবেলা হামার এইখানে ইউএনও সাহেবকে দেখে চমকি গেছে বা। হামাক কৈইল দাঁড়াও। বুড়া বুড়ির ফোট তুলে নিল। ফোট তুলার পর কহিনো কি হবে ব্যাপার কি। বলল ঘর হবে। শুনে খুবেই আন্দন লাগিছে বা। কোনদি ধারণা করিবা পারি নাই। প্রধানমন্ত্রী হামাক বাড়ী দিবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমার মন কি কহেছে। উপরে আল্লাহ জানে আর আমি জানি। ওনার জন্য আমি সবসময় কাঁদি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেনো ওনাক অনেকদি বাঁচায় রাখক।’
বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ছয় ইউনিয়নের ৪৩০ টি গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। বয়স্ক ৪৪ জন, দিনমজুর ২৩৫ জন, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ৩ জন, বিধবা ৩০ জন, প্রতিবন্ধী ১২ জন, ভিক্ষুক ২৭ জন, ক্ষুদ্র – নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ৭৮ জন এবং তৃতীয়লিঙ্গ ১ জন সর্বমোট ৪৩০ জন পরিবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়স্থল হিসেবে অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই হচ্ছে।
বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছন্দা পাল জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়স্থল হিসেবে অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীদের গৃহ দিচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আমার উপজেলায় ৪৩০ টি গৃহ নির্মাণ হচ্ছে। প্রকৃত অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে।