কোচ অস্কার ব্রুজোন মৌসুমের শুরু থেকে বলে আসছেন এবারের বসুন্ধরা কিংস গতবারের চেয়ে শক্তিশালী, আরো ভারসাম্যপূর্ণ। প্রতি ম্যাচে এর প্রমাণ দিচ্ছেন শিষ্যরা। কুমিল্লায় যে মোহামেডান তাদের হারের স্বাদ দিয়েছিল গতবার, তাদেরই কাল ৪-১ গোলে হারিয়ে লিগে টানা পঞ্চম জয় তুলে নিয়েছে দলটি।

আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথের রেশ কাটতে না কাটতেই ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে সাদা-কালোর মুখোমুখি হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন কিংস। যাদের খেলা মানেই দর্শকের মন রাঙানো। দর্শকরাও সেদিনের মতো গ্যালারি ভরিয়ে তুলেছিল। তাদের হতাশ হতে হয়নি। সুন্দর ফুটবলের সুরভি ছড়িয়েই ম্যাচ জিতে নিয়েছেন রাউল, রোবিনহোরা। তাতে লিগ শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়েও আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে কিংস। ঢাকার মাঠে আবাহনী কাল টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছে। সেখানে কিংসের পাঁচে পাঁচ।

মোহামেডানের বিপক্ষে আট মিনিটেই এগিয়ে যায় চ্যাম্পিয়নরা। বক্সের মুখে জোনাথান ফার্নান্দেসকে বল ঠেলে নিজে দ্রুত পজিশন নেন রাউল বেতেরা, ফার্নান্দেস ডান দিক থেকে ক্রস ফেলতেই হেডে তা জালে জড়িয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। এই গোলের ধাক্কা কাটিয়ে মোহামেডান সমতায় ফিরেছিল দ্রুতই, ২২ মিনিটে। আতিকুজ্জমানের লম্বা থ্রো ইন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান আয়ত্তে নিতে না পারলে বক্সের ভেতর থেকে দারুণ ভলিতে তা জালে জড়িয়ে দেন আবিওলা নুরাত। তাতে মোহামেডান-আবাহনী লড়াইয়ের মতো এ ম্যাচেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ ছড়ালেও তা উবে যেতে সময় লাগেনি কিংসের গোছানো আক্রমণে।

আর দলে রোবিনহোর মতো জাদুকরী পারফরমার থাকলে সেই দল তো বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেয়ই। বিরতির আগে সেই রোবিনহোর মাঠ-মাতানো গোলেই আবার লিড বাড়িয়ে নেয় কিংস। প্রায় মাঝমাঠ থেকে ড্রিবলিং শুরু করেন রোবিনহো, মাঝখানে ফার্নান্দেসের সঙ্গে একবার ওয়ান টু করে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন, এরপর গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে আলতো চিপে বল জালে জড়ান। দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা এই গোলেই যে ফুটে ওঠে। বিরতির পর মোহামেডানকে আর সুযোগই দেয়নি কিংস। খেলা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাউন্টার অ্যাটাকে ফার্নান্দেস ব্যবধান ৩-১ করে ফেলেন। ফার্নান্দেস-বিশ্বনাথ আবার ফার্নান্দেস, নিজেদের বক্সের ওপর থেকে বল নিয়ে দৌড় শুরু করে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার গোল করে বেরিয়ে আসেন। মোহামেডানের বক্সে বিশ্বনাথের বাড়ানো বল যখন পায়ে নিয়েছেন তখন গোলরক্ষক এগিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু তাঁর পাশ দিয়েই ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দিয়েছেন বোতাফোগোয় ক্যারিয়ার শুরু করা এই ফুটবলার। খেলা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট বাকি থাকতে রাউল বেতেরা করেছেন নিজের দ্বিতীয় গোল।

বক্সের ভেতর ফার্নান্দেসকে পেছন থেকে দৌড়ে এসে ফাউল করেছিলেন জাফর ইকবাল। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালে স্পট কিক থেকে ব্যবধান ৪-১ করেছেন কিংস স্ট্রাইকার। ফেডারেশন কাপের যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা রাউলের লিগে এটি তৃতীয় গোল। পাঁচ ম্যাচে রোবিনহোর গোল পাঁচটি, শেখ জামাল স্ট্রাইকার ওমর জোবের সঙ্গে যা যৌথ সর্বোচ্চ। কিংস এককভাবে শীর্ষে পাঁচ ম্যাচে শতভাগ জয়ে। এর আগে একে একে তারা হারিয়েছে বারিধারা, পুলিশ, ব্রাদার্স ও রহমতগঞ্জকে। ফেডারেশন কাপ ধরলে মৌসুমে এটি তাদের টানা দশম জয়। আর লিগে মোহামেডানের দ্বিতীয় হার এটি। পাঁচ ম্যাচে এক জয় ও দুই ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৫।