চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন ২৩টিতে। এই ধাপের একটি পৌরসভা ফেনীর পরশুরামে ক্ষমতাসীন দলের সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়ও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নাটোর সদর আর মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। ফলে মেয়র পদে নির্বাচন হয়েছে ৫৪টি পৌরসভায়। এসব পৌরসভায় প্রদত্ত ভোটের হার ৬৫.৩৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ ৯২.৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বরিশালের বানারীপাড়ায় আর সর্বনিম্ন ৪৬.০৭ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়। ২৫টি পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীরা দ্বিতীয় অবস্থানেও থাকতে পারেননি।

গত রবিবার অনুষ্ঠিত মোট ৫৫টি পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়সহ ৪৯টিতে। বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন শুধু সাতক্ষীরা সদর পৌরসভায় আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন পাঁচটিতে।

নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া এ ধাপের নির্বাচনে মেয়র পদের ফলাফল বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ধাপের নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হয় ২৯টি পৌরসভায়। ইভিএমে সর্বোচ্চ ৮০.১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভায় আর সর্বনিম্ন ৪৬.০৭ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়। ইভিএমে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে ব্যালটে ভোট হয় ২৬টি পৌরসভায়। কাগজের ব্যালটে সর্বোচ্চ ৯২.৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বরিশালের বানারীপাড়ায় আর সর্বনিম্ন ৫৩.৮০ শতাংশ ভোট পড়ে নরসিংদী পৌরসভায়। এ পৌরসভায় চারটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রয়েছে। ব্যালটে গড়ে ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশের ওপরে। ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে রাজশাহীর নওহাটা, তানোর ও তাহিরপুর, যশোরের বাঘারপাড়া এবং রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভায়।

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা যেসব পৌরসভায় জামানত হারিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে রানীশংকৈল, কালাই, বড়াইগ্রাম, তাহিরপুর, জীবননগর, চৌগাছা, বাঘারপাড়া, বাগেরহাট, মুলাদী, গোপালপুর, বাজিতপুর, মিরকাদিম, মাধবদী, রাজবাড়ী, নগরকান্দা, আখাউড়া, দাউদকান্দি, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ, রামগতি, পটিয়া, চন্দনাইশ ও ত্রিশাল। আইন অনুসারে, পৌরসভা নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশের কম পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন ২৭টিতে। ওই ধাপের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ছিল ৭০.৪২ শতাংশ এবং নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভায় সর্বোচ্চ ৯২.১৪ শতাংশ আর মৌলভীবাজার সদরে সর্বনিম্ন ৪১.৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে।

তৃতীয় ধাপের তিনটি পৌরসভায় মেয়র পদে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ কারণে মেয়র পদে ভোট হয় ৬১টি পৌরসভায়। এই ৬১টি পৌরসভার মধ্যে ৩৬টি পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীরা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিশোরগঞ্জ সদর ও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল সন্তোষজনক।

বেসরকারি ফলাফল অনুসারে আগের তিন ধাপের নির্বাচনের মতো এই ধাপেও প্রাপ্ত ভোটের হারে ধারেকাছে নেই বিএনপি। ৫৫টি পৌরসভার মধ্যে ৫৪টিতে (একটি পৌরসভায় মেয়র পদে ভোট হয়নি) মেয়র পদে প্রদত্ত ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩১ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছেন ছয় লাখ ২৮ হাজার ২৮৯ ভোট বা ৫৯ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে এই ৫৪ পৌরসভার মধ্যে একটি পৌরসভা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। অন্য ৫৩টি পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা পেয়েছেন দুই লাখ এক হাজার ১১৪ ভোট বা ১৯.০৭ শতাংশ।

এর আগে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৬১টি পৌরসভায় প্রদত্ত ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আট লাখ ৩১ হাজার ৩৬৯ ভোট বা ৬১.৮৫ শতাংশ এবং বিএনপির প্রার্থীরা তিন লাখ ৯৯ হাজার ৯১১ ভোট বা ২৯.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তৃতীয় ধাপেও ভোট হয়েছে এমন একটি পৌরসভা খুলনার পাইকগাছায় বিএনপির প্রার্থী ছিল না।

দ্বিতীয় ধাপে মোট প্রদত্ত ভোটের ৬০ শতাংশ পড়ে নৌকায়। আর ধানের শীষে পড়ে ১৭.৯০ শতাংশ। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৬৪ শতাংশ ভোট। আর বিএনপি পেয়েছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ।

গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমে ভোট পড়েছিল ৬৫.২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে গত ১৬ জানুয়ারি ২৬টিতে ইভিএম এবং ৩০টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। ওই ধাপে গড়ে ৬১.৯২ শতাংশ ভোট পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চারটি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র পদে ভোট হয়নি। বাকি ৫৬টি পৌরসভার মধ্যে ৩০টিতে জামানত হারান বিএনপির প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিপুল বিজয়ের মধ্যেও একটি পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী জামানত হারান।