আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নানা কর্মসূচি আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি সারা দেশে পালিত হচ্ছে। এদিকে আবার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো নারী-শিশুকে যৌন পেশায় লিপ্ত করানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার পরও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। পল্লীর প্রভাবশালী বাড়িওয়ালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে দালালচক্রও। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা সাধারণ মেয়েদেরকে নানাভাবে ফুঁসলিয়ে এনে ওই পল্লীতে পাচার করে। পরে আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ওই সব শিশু-কিশোরীদের জোর করে যৌন ব্যবসার কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা আয় করে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালীরা। 

জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লী। বর্তমান এই পল্লীতে প্রায় দুই হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক শিশু-কিশোরীও রয়েছে। ওই পল্লীর প্রভাবশালী বাড়িওয়ালীদের ছত্রছায়ায় এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল এক দালালচক্র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা নানা কৌশলে সাধারণ মেয়েদেরকে ফুঁসলিয়ে এই যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে। পরে বিভিন্ন বাড়িওয়ালীর কাছে নগদ টাকায় তাদেরকে বিক্রি করে।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ভেতরে অবস্থিত এক মুদি দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখানে অনেক প্রভাবশালী যৌনকর্মী রয়েছেন। তাদের অনেকেই পল্লীর বাইরে গোয়ালন্দ পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিজস্ব বাড়িঘর তৈরি করে নিয়মিত বসবাস করছেন। পাশাপাশি নারী পাচার কাজে তারা তাদের ওই বাড়িগুলোকে ব্যাবহার করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ফুঁসলিয়ে আনা নতুন কোনো মেয়েকে সরাসরি যৌনপল্লীতে না এনে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালী প্রথমে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে দুই-তিন দিন ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার পর সুযোগ বুঝে ওই মেয়েকে যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, দালালের মাধ্যমে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১০ জন নতুন নারী শিশু-কিশোরীকে এই নিষিদ্ধ পল্লীতে আনা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালীরা তাদেরকে জোর করে যৌনপেশা গ্রহণে বাধ্য করেন। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অপ্রাপ্ত বয়সী মেয়েসহ কোনো নারীকে যৌনপেশায় লিপ্ত করানো সম্পূর্ণ আইন নিষিদ্ধ। কিন্তু দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বর্তমান পাঁচ শতাধিক শিশু যৌনকর্মী রয়েছে। আইনের চোখকে ধুলো দিয়ে তাদেরকে যৌনপেশায় লিপ্ত করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কামাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালা ও বাড়িওয়ালীরা। যৌনপেশার হাত থেকে শিশুদের সুরক্ষা করতে দৌলতদিয়া পল্লীতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে মুক্তি মহিলা সমিতি, পায়াক্ট বাংলাদেশ, অবহেলিত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থাসহ স্থানীয় বেশকিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

পল্লীর সচেতন কয়েক জন যৌনকর্মী জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীকে ঘিরে যে পরিমাণ এনজিও গড়ে উঠেছে, ওইসব এনজিও যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতো তবে এই পল্লীতে যৌনকর্মীর সংখ্যা অনেক কমে যেত। অথচ তা না করায় এই পল্লীতে শিশু-কিশোরী যৌনকর্মীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

মুক্তি মহিলা সমিতির (এমএমএস) নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে অপ্রাপ্ত বয়সী যৌনকর্মীদের উদ্ধারে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক যৌনকর্মীকে আমরা উদ্ধার করে তাদেরকে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছি। 

গোয়ালন্দঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের উদ্ধার ও দালালদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন কিশোরী উদ্ধার ও সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’